ফোন করে পিসি চালু করার পদ্ধতি নিয়ে আসছে ইন্টেল

১ ডিসে, ২০০৮ · 0 মন্তব্য(গুলি)

বিশ্বখ্যাত ইন্টেল কর্পোরেশন বাজারে নিয়ে আসছে ইন্টারনেট ফোন কলে কম্পিউটার চালু করার প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাওয়ার সেভিং স্লিপে থাকা পিসি ইন্টারনেট ফোন কলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে।

X-raysScotchTapeফোন কল রিসিভ করতে অনেক সময় পিসি পুরোপুরি চালু রাখতে হয়। এতে কল রিসিভের জন্য অকারণ শক্তির অপচয় হয়।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে পিসিতে ফোন আসা মাত্র ইন্টেল ঘোষিত এই প্রযুক্তি পিসিকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পুরো শক্তি সরবরাহ করে স্লিপ মুড থেকে স্বাভাবিকে ফিরিয়ে আনবে। তখন পিসি তার মাইক্রোফোন ও লাউডস্পিকার চালু করে ইউজারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, এর পর কলটি সংযুক্ত করবে।

ইন্টারনেট টেলিফোন কোম্পানি ‘জাজাহ’ এই ফিচারটির প্রথম ব্যবহারকারী হতে যাচ্ছে। জাজাহ-এর চিফ একজিকিউটিভ ট্রেভর হেলি বলেন, “যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে পিসিকে এই প্রযুক্তি আরও একধাপ এগিয়ে নেবে।”

রিমোর্ট ওয়েকআপ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম ইন্টেল মাদারবোর্ডগুলো সামনের মাসে সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানান ইন্টেলের কনজুমার প্রোডার্ট মার্কেটিং ডিরেক্টর জো ভেন ডি ওয়াটার।

কম্পিউটারের কেন্দ্রে অবসি'ত এই সব উপাদান সাধারণত ছোট প্রস'তকারক কোম্পানি ব্যবহার করে। ডেল আইএনসি এবং পেকার্ড কমের মত বড় প্রস্তুতকারকরা নিজস্ব মাদারবোর্ড সলিউশন ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু ইন্টেল এসবের সাথে প্রযুক্তিগত সুবিধাও দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

চার ধরণের প্রাথমিক রিমোর্ট ওয়েকআপ মাদারবোর্ডগুলো ডেস্কটপ কম্পিউটারে ব্যবহার করা হবে। এর জন্য তারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হবে, কেননা স্লিপ মুডে ওয়াই-ফাই অকার্যকর।

ভেন ডি ওয়াটার জানান, ব্যবহারকারী যে সকল সার্ভিসের গ্রাহক হবেন শুধুমাত্র সে সকল কলে কম্পিউটার চালু হবে। তাই ভুল কলে পিসি চালু হওয়াটা অসম্ভব।

অন্যদিকে ওয়েব কোম্পানি এবং ফোন সিস্টেমের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারক হিসেবে ক্যালির্ফোনিয়া ভিত্তিক জাজাহ নিজেদেরকে তৈরি করছে। এপ্রিলের এক চুক্তি অনুসারে এরা ইয়াহু মেসেঞ্জারের ফোন সেবাদানকারী হিসেবে নিয়োগ পায়।

নাম্বার এবং নাম উভয় দিয়ে ডায়াল করে গ্রাহক পিসি চালু করতে সক্ষম এই পদ্ধতি। গুগল টক এবং মাইক্রোসফটের উনডোজ লাইভ মেসেঞ্জারের মত ইন্টারনেট ভয়েজ সার্ভিস এবং অন্যান্য ইন্সট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিসে পিসি চালু করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে জাজাহ বলে জানান হেলি।

প্রেমের খভিতা: সময়কাল: ১৯৯৭-২০০৪ ;)

· 0 মন্তব্য(গুলি)




একসময় বউকে পটাতে কিছু কিছু খভিতা লিখতাম..সেটাও ২০০০ এর আগের ঘটনা। ব্লগার সৌপ্তিক আমার একটি পোষ্টে আমাকে এবং আমার বউকে নিয়ে একটা খভিতা উপহার দেয়। আমার খভিতা রচনা কালে আমি দুটো নাম ব্যবহার করতাম। সেগুলো দিয়ে এই খভিতাটা সংরক্ষণের জন্য আলাদা একটা পোষ্ট দিলাম। কবি সৌপ্তিকের জন্য থাকলো অনেক অনেক ধন্যবাদ।।

সময়কাল: ১৯৯৭-২০০৪

প্রেম নাই এ দুনিয়ায় প্রেম নাই
এই ভেবে সীমান্ত বাসে করে যাচ্ছিল
হঠাৎ করে দেখে এক রুপসী রাস্তার ওপাশে
ওমনি সীমান্ত কলিজা চিরে ডাক আসলো।

কি আর করা চলতি বাস থামাবে কে
সীমান্ত শুধু চেয়ে আছে কিছুদুর যেতে
সুন্দরী হারিয়ে গেছে।

হাহাকার নিয়ে সীমান্ত ঘুরে দিশেহারা
হঠাৎ করে পায় আবার সুন্দরীর দেখা
পিছু নেয় এবার অনেক কষ্টে সে হাসি দেয়
সুন্দরী একটুও চান্স না দেয়
এই দেখে সীমান্ত ঝাজা পায়

সীমান্ত নাছোড়বান্দা প্রেম সে করবেই
সুন্দরী তো ভাব মারবেই
পিছু নিয়ে সীমান্ত সুন্দরীর বাসা চেনে
বাসাটা তিন তলা
সম্মুখে তার বারান্দা।

প্রতিদিন সীমান্ত সুন্দরীর বাসার সামনে আসে
অবাক নয়নে বারান্দার দিকে চেয়ে থাকে
সুন্দরী তো আসে না
সীমান্ত ও হাল ছাড়ে না।

হঠাৎ একদিন বাদলা দিনে
সীমান্ত পাশের ওই চায়ের দোকানে
বৃষ্টি দেখতে আসে সুন্দরী
এই বুঝি সীমান্ত হয় কবি
কি সুন্দর তার রুপ।

সুন্দরী প্রথম দেখে সীমান্তকে
মনে হয় তার মনে প্রেম জাগে
চোখে চোখে কথা হয়
এই বুঝি প্রেম হয়।

হঠাৎ পাড়ার গুন্ডারা দাদাগিরি দেখায়
সীমান্ত আচ্ছামত মার খেয়ে তাগড়া
আশিক হয়।
হাল ছাড়ে না সীমান্ত
চিঠি লিখে সুন্দরীকে
বলে তার হৃদয়ের বেদন।

এই প্রথম সুন্দরী হাতে চিঠি পায়
নিচে সীমান্তের নামটি দেখতে পায়
সুন্দরী পাল্টা জবাব দেয়
তার মনের আশা তারে কয়
সীমান্ত চিঠি পায়
সুন্দরীর নাম নদী জানা হয়।

নদী তাঁরে বাসার ফোন নাম্বার দেয়
দুপুরে তার ফোন করতে কয়
সীমান্ত তাঁরে ফোন দেয়
ভীরু ভীরু গলায় দুজনে
কথা কয়।

এ ভাবে চলে চার মাস
তাদের প্রেম গাঢ় হয়
হঠাৎ একদিন সীমান্ত নদীর স্কুলে গিয়ে হাজির
নদী অবাক হয় মনে মনে খুশি হয়
সীমান্ত হাতে নিয়ে গোলাপ
জানায় তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা
এই দেখে নদী আবেগপ্লুত হয়।

না না এভাবে আর কদিন
দেখা না হলে মন ভরে কথা না হলে
কাটেনা দিবা স্বপন
তাই ঠিক হলো স্কুল ফাকি দিয়ে নদী
আসবে পার্কে, মন ভরে দুজনে বাদাম খাবে।

ঠিক তাই হলো দুজনে দেখা হলো
এই প্রথম হাতে হাত চোখে চোখ
অনেকটা সময় হলো কথা
মাঝে মাঝে এদিক সেদিক চাওয়া।

এর পর চললো সাঁই সাঁই প্রেম
দুজন শুধু দুজনার
প্রেমে কি শুধু মধু
জ্বালাও থাকে
কি নিয়ে যেনো ঝগড়া বাধলো
এর পর কথা কাটাকাটি হলো
কিছু দিন কথা বন্ধ
বিরহে সীমান্ত বিরহে নদী
ইন্টারমিশন আইলো।

কেমনে কেমনে জানি সর্ম্পক ঠিক হইলো
আবার দুজনে মিললো
মাঝে মাঝে সীমান্ত খভিতা লিখতো
নদী পইরা হাসতো।
আইলো মোবাইলের যুগ
সর্ম্পক আরো সহজ হইলো।

অনেক বছর পার হইলো
নদীর বিয়ের চাপ আইলো
সীমান্ত তখনো বেকার
হয়নি তার আকার
দুজনেই চিন্তিত কি হবে না হবে
এই ভেবে আশাহত।

হঠাৎ সীমান্ত ডিসিশান নিলো
পালিয়ে যাবে নদীকে নিয়ে
যা হবে কপালে
পরে দেখা যাবে।
বান্ধবীর বাসার নাম করে নদী পালালো
সীমান্ত তাঁর জন্য বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষারত।

দুজনে বাসে করে পালালো
সীমান্ত তার বন্ধুর বাসায় উঠলো
তাঁরা শুভবিবাহ সেরে
ঝামলোমুক্ত হলো।
তিনমাস হলো নদীর বাসার
সবাই পাগল হ্ইলো
সীমান্তের মা শয্যাশায়ী
সীমান্তের বন্ধুরা বকা খাইলো।

বন্ধু মারফত খবর পাইয়া সীমান্ত বাড়ি আইলো
বাপের হাতে কিছু উত্তম মাধ্যম খাইলো
মেনে নেয় না তারা এ বিয়ে
দুলাভাই এসে ঝামেলা চুকালো।

ওদিকে মেয়ের ঘরে সবাই কান্দে
সীমান্তের দুলাভাই তাঁদের
সীমান্তের ঘরে আনে।
কার জানি রহমত
সবাই এ বিয়া মাইনা নিলো।

ওদিকে সীমান্ত চাকরী খুজে
হন্য হইয়া জুতা ছিড়ে
কিছুতেই হয়না কিছু
সবার পেরেশানি বাড়ে

কি রহমত! কি রহমত
দুলাভাই ভিসা আনে
ভিসা পাইয়া সীমান্ত নদীর কাছ থেকে
বিদায় নিয়া বিদেশ গেলো।

বিদেশ তার ভালো লাগে না
নদীরে মিস করে এই কথা কইতেও পারে না
কি আর করা সবই কপাল
তাই মাঝে মাঝে স্বদেশে পলায়।

[আমাদের বউয়ের সাথে আমার প্রথম দেখা ১৯৯৭ এ, কিছুদিন তার হাউজ টিউটর ছিলাম। পরে দুজন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। পাস করে দুজন চাকরী করি দু'শহরে। বিয়ের পরও তাই থাকে। এরপর সরকারী বৃত্তি নিয়ে সে চলে যায় এক দেশে আমি পড়াশোনা করতে কানাডায়। আমি আসার অল্প কিছুদিন পর ও এখানে আসে। আমাদের মূল সংসার আমরা কানাডাতেই শুরু করি। সৌপ্তিককে আমাদের প্রেমের সময়কাল টা বলেছিলাম। সেটা নিয়ে এত চমৎকার সাহিত্য রচনা করেছে...এক কথায় অতুলনীয়]

মাত্র ১ ঘন্টায় টাক মাথায় চুল গজান: ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ ছাড়!!

২৮ নভে, ২০০৮ · 0 মন্তব্য(গুলি)

এই মাত্র মেইল খুলে খুবই প্রফেশনাল একটা মেইল পেলাম। ১০০% প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মাত্র ১ ঘন্টায় টাক মাথায় চুল গজানোর অফার। তাও ঈদের আগে করলে বিশেষ ডিসকাউন্ট।



আ্যডের ছবিতে সৌম্যদর্শন এক বৃদ্ধকে একেবারে যুবা বানিয়ে ফেলা হয়েছে দেখলাম। ব্লগে অনেকের চাদির কাছে চুল পাতলা দেখি.. (কৌশিক, সাদাত ভাই..........নাম যোগ হতে পারে)। খোজ করে দেখতে পারেন।

বনানী শাখায় ভিআইপি ট্রিটমেন্ট (!!) এর সুব্যবস্হা আছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কি কি করবে?

· 0 মন্তব্য(গুলি)



আমরা একটা টু ডু লিস্ট করতে পারি। কি কি করবে বলে ঘোষনা দিয়েছে এবং করতে পারে বলে আমরা আশা করি।

১. গত ২ বছরের সব কাজের ইনডেমনিটি
২. বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন
৩. এরশাদকে সাময়িক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন
৪. দ্রব্য মূল্যের দাম একেবারে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা
৫. তেলের দাম কমানো
৬. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্হা
৭. ধর্ম ভিত্তিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষনা
৮. আব্দুল জলিল, আবু সাঈদ, মান্না, জাহাঙ্গীর, সাবের, চার খলিফা সহ অন্যান্য বিদ্রোহীদের মৃদু শাস্তির ব্যবস্হা
৯. নিজ দল এবং বিএনপি, জামাত সহ অন্যান্য দলের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্হান এবং আইনানুগ ব্যবস্হা
১০. বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা দেশে ফেরত আনা
১১. ট্রানজিট এবং বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের সাথে চুক্তি করা
১২. তেল, গ্যাস এবং কয়লা নিয়ে বন্ধ হয়ে থাকা কার্যক্রমকে চালু করা
১৩. জয় এর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগমন
১৪. বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় বাস্তবায়ন, ২১ আগষ্ট সহ অন্যান্য বোমা হামলার বিচার সম্পন্ন করা
১৫. জঙ্গীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু (রাফা)
১৬. ভারত এবং মায়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমানা বিরোধের অবসান (রাফা)
১৭. তারেক জিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা বেসরকারী খাতে ভাগবাটোয়ারার ব্যবস্থা করা (অমি পিয়াল)
১৮. বিটিভি-র স্বায়ত্বশাসন করবে (ক্রাউন)
১৯. ..

আপনারাও যোগ করুন।

সামহোয়্যার ব্লগের প্রথম পাতা!!

২৬ নভে, ২০০৮ · 0 মন্তব্য(গুলি)

বসে বসে ব্লগের পুরানো পাতা দেখছিলাম। ভাবলাম প্রথম পাতা টি দেখি। সামুতে এই পর্যন্ত ৬৭০৯ পাতা লেখা হয়েছে। মোট পোষ্ট আনুমানিক ১০০৬২০ টি। প্রথম পোষ্টটি করেন দেবরা , ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৫ দুপুর ২:২৬ মি:। প্রথম পোষ্টটির বানান ভূল আছে:

ইমরান ব্লগ স্রষ্ট া

প্রথম পাতায় দেবরার পোষ্ট আছে ৪ টি। সমকালের গান এর পোষ্ট আছে ১ টি। এবং আড্ডাবাজ এর পোষ্ট আছে ২টি। ব্লগ ডেভেলপার হাসিনের পোষ্ট আছে ১ টি (বর্তমানে প্রথম আলো ব্লগের সাথে জড়িত)

কিছু ছবি:



যুদ্ধাপরাধীদের স্বার্থেই মামলা!!

· 0 মন্তব্য(গুলি)

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ৩৬ জনকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করার আবেদন জানিয়ে ঢাকা জেলা আদালতে দায়ের করা মামলা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। আজকের সমকালে এই বিষয়ে একটি রির্পোট এসেছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের লে. জেনারেল (অব.) এম হারুন অর রশিদ সমকালকে বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ জামায়াতকে আইনগত বৈধতা দিতেই এ মামলা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, গোলাম আযমের নাগরিকত্ব নিয়ে যেমনটি হয়েছে, এ মামলার পরিণতিও তা-ই হয় কি-না এটাই সন্দেহ। তিনি বলেন, হঠাৎ করে দায়ের করা এ মামলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামসহ যুদ্ধাপরাধী পক্ষের সংগঠন ও ব্যক্তিরা যুদ্ধাপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন। জাতীয় নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিরোধ করারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঠিক সে সময় গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ফজলুল কাদের চৌধুরী, তার ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ৩৬ জনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ঘোষণা করার জন্য তিন তরুণ আইনজীবী গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। বিবাদীরা যাতে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করতে না পারেন এবং কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন সে মর্মে তাদের অযোগ্য ঘোষণারও আবেদন করা হয়েছে। এ মামলায় প্রমাণপত্র (ডকুমেন্টস) হিসেবে ১৯৮৪ সালে তথ্য মন্ত্রলয়ের প্রকাশিত বাংলাদেশের স্টাধীনতা যুদ্ধে দলিলপত্র থেকে বিবাদীদের বিবৃতি ও ভূমিকা সংবলিত বক্তব্য দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ঘোষিত ৫০ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকাও মামলায় দলিল হিসেবে উপস্হাপন করা হয়েছে। এর বাইরে তাদের হাতে আর কোনো প্রমাণপত্র নেই বলে জানা গেছে। জানা যায়, কোনো মামলা আইনগতভাবে প্রমাণের জন্য যে ধরনের তথ্য-প্রমাণ দরকার পড়ে, এর কোনো কিছুই এখন পর্যন্ত তাদের হাতে নেই।

লে. জেনারেল (অব.) এম হারুন অর রশিদ বলেন, ‘অপরিকল্কিপ্পতভাবে মামলা করার কারণে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বৈধ বলে আদালত রায় দিয়েছেন। ঠিক একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বলেই আমাদের সন্দেহ। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ঘোষণার জন্য দায়ের করা এ মামলা প্রমাণের জন্য কী ধরনের ডকুমেন্টস ব্যবহার করা হবে তা আমাদের জানা নেই। এমনকি তাদের হাতে আদৌ কোনো ডকুমেন্টস আছে কি-না তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’ তিনি বলেন, কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করেই মামলাটি করা হলো। জামায়াত টাকা দিয়ে মামলাটি করিয়েছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ জামায়াত বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য দেদার টাকা খরচ করছে। এ মামলা যদি খারিজ হয়ে যায়, তবে যুদ্ধাপরাধীরা আইনগত ভিত্তি পেয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, দেশের সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম আন্দোলনে আছে। একই ইস্যুতে স্বাধীনতার সপক্ষের সব শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ। ঠিক এ সময় কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়া মামলা করার অর্থ কী?

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, বাদী বা আইনজীবী কেউই এ মামলা করার বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করেননি। এভাবে এ মামলা করা কতটুকু যথাযথ হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

মামলার বাদী তিন তরুণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ লিটন, মোঃ সাফায়াৎ হোসেন, এবং শিক্ষানবিশ আইনজীবী রাজিব আহমেদ। এ তিনজনই বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের বর্তমান ও সাবেক নেতা। তাদের আইনজীবী খন্দকার মহিবুল হাসান আপেল মিরপুরের রূপনগর ল’ কলেজের প্রভাষক। তারা বলেন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম যুদ্ধাপরাধী হিসেবে নাম প্রকাশের পর আজ পর্যন্ত কেউই প্রতিবাদ করেননি। ফলে এটা ধরে নেওয়া যায়, বিবাদীরা প্রকৃতপক্ষে অপরাধী। তারা আরো বলেন, বিবাদীরা মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্হানী হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে এ দেশে পাকিস্হান সরকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি নামে বিভিন্ন কমিটি গঠন করে বাংলার অর্জিতব্য স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের অপতৎপরতা নিষিদ্ধ না হওয়ায় দেশের টেকসই উল্পুয়ন হচ্ছে না। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আইনগতভাবে তাদের যুদ্ধাপরাধী ঘোষণার জন্য মামলাটি করা হয়েছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে তাদের সহায়তা দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

সজীব ওয়াজেদ জয় : বাংলাদেশের এক ডালিমকুমার

২৫ নভে, ২০০৮ · 0 মন্তব্য(গুলি)

আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বেশ কয়েক বছর বিদেশ থাকার পর যখন দেশে ফিরে এসেছিলেন, বিমানবন্দরসহ সর্বত্র তাকে দেয়া হয়েছিল সংবর্ধনা। শেখ হাসিনার ইচ্ছা ছিল তার উত্তরসূরি হিসেবে তারপরে জয়ই হবেন দলের প্রধান। কিš' রাজনীতিবিদের কঠিন দায়িত্ব জয় কী পালন করতে পারবেন? আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে তিনি যুক্তরাষ্টের জীবন যাপনে অভ্যস্ত এবং খুশি। যদিও বেশ কয়েকবারই তিনি সেখানে আইনের কঠিন আবদ্ধে ধরা পরেছেন। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত সাপ্তাহিক প্রোবে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের ট্রান্সক্রিয়েশন করেছেন ফয়সল আবদুলাহ ও সৈয়দ মাহ্মুদ জামান। (আমাদের সময়)

মাতাল হয়ে গাড়ি চালানো, অবৈধ অস্ত্র এবং জয়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাপন জয়কে খুব একটা পরিবর্তন করতে পারেনি। তার চরিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বেপরোয়া ভাব বার বার ফিরে এসেছে তার জীবনে। বিভিন্ন রেকর্ড খুঁজে দেখা গেছে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে মাতাল হয়ে গাড়ি চলানো, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, রাডার ডিটেকশন ডিভাইসের অবৈধ ব্যবহার এমনকি অবৈধ অস্ত্র রাখা। এসব কৃতকর্মের জন্য তাকে কারাবাসও করতে হয়েছে, মোটা অংকের জরিমানাতো আছেই। শেখ হাসিনা যদি দলের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে চিন্তা করে থাকেন, তবে জয়ের চেয়ে অনুপযুক্ত প্রার্থী তিনি পাবেন না।

জয় মূলত অরাজনৈতিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে চলেছেন। তিনি বাড়িতে জনসাধারণের ভিড় একেবারেই পছন্দ করেন না। তাছাড়া রাজনীতির প্রতি তার অপছন্দও তিনি প্রকাশ করেছেন। আগ্রহ বা কৌতূহল নিয়ে শেখ মুজিবের নাতির সঙ্গে দেখা করতে আসা অনেকের সঙ্গেই জয় অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করেছেন।


যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে গিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আপাত কোনও সম্পর্ক জয় রাখেননি। তার মার রাজনৈতিক দলটির প্রতিও তার কোনও আসক্তি ল করা যায়নি, এমনকি দেশে তার পরিবারের সঙ্গে বসবাস করার ইচ্ছাও তার ছিল না।

জয়ের জীবনে প্রেম ও বিয়ে
শেখ হাসিনার শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) স্কুল জীবনের এক বান্ধবীর সঙ্গে জয়ের বাগদান হয়। কনে ভারতের এক শিখ পরিবারের মেয়ে। শেখ হাসিনা সরকারি সফরের নামে লন্ডনে গিয়েছিলেন বিয়ের কথা পাকা করতে। সঙ্গে গিয়েছিল আÍীয়-স্বজন ও পারিবারিক বন্ধু-বান্ধব। আরও সঙ্গে নিয়েছিলেন ঢাকার বিখ্যাত ফখরুদ্দিন বাবুর্চির সহকারীদের। তবে তার একমাত্র শর্ত ছিল মেয়েকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। কিš' সেই মেয়ে এতে অস্বীকৃতি জানায়। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শেখ হাসিনা সেদিনই সকল অনুষ্ঠান বাতিল করে দেন। তিনি সারাদিনই হোটেলের কে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখেন এমনকি কারও সঙ্গে কথাও বলেননি। বিয়ের সেই অনুষ্ঠান আর হয়নি। কোনও অনুষ্ঠান না হওয়ায় অতিথিরা বিরিয়ানি না খেয়েই ঢাকায় ফিরে আসেন।

জয় বর্তমানে মার্কিন নাগরিক ক্রিস্টিন অ্যান ওভারমাইন ওরফে ক্রিস্টিনা ওয়াজেদের সঙ্গে বিয়ের বদ্ধনে আবদ্ধ। ২৬ অক্টোবর ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বিয়ে হয়। জনৈক রিচার্ড ডি লুমিসের সঙ্গে আগে ক্রিস্টিনের বিয়ে হয়েছিল বলে জানা গেছে। গুজব শোনা গিয়েছিল জয়-ক্রিস্টিনার তালাক আসন্ন। তবে সন্তান জন্মের কারণে সম্পর্কের টানাপোড়েন বা আলাদা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সম্ভবত এখন আর নেই।

গ্রেফতার এবং অভিযোসমুহ
১৪ জুন ১৯৯৮, টেক্সাসের টারান্ট কাউন্টিতে জয় গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখা ও মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে ১২০ দিনের কারাবাস, ২৪ মাসের প্রোবেশন এবং ৫০০ ডলার জরিমানার আদেশ দেয়।


৬ ফেব্র“য়ারি ২০০৬, ভার্জিনিয়ার হ্যানোভার কাউন্টিতে গ্রেফতার হন জয়। তার বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়িচালানো এবং বেআইনিভাবে রাডার ডিটেকটর সঙ্গে রাখার অভিযোগ আনা হয়। সাজা একদিনের হাজতবাস এবং জরিমানা।
১৯ মার্চ ২০০০, ভার্জিনিয়ার ফেয়ারপ্যাক্স কাউন্টিতে জয় গ্রেফতার হন। বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আদালত তাকে ৩০ দিনের সাসপেন্ডেড কারাবাস সঙ্গে ১২ মাসের প্রোবেশন ও ৪০০ ডলার জরিমানা করা হয়।
এছাড়া ২৯ এপ্রিল ২০০১, ভার্জিনিয়ার রাপাহ্যানোক কাউন্টিতে এবং ২০ মে ২০০৪, আরলিংটন কাউন্টিতে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চলানোর দায়ে অভিযুক্ত হন জয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আদালতের খরচও জয়কেই বহন করতে হয়েছে।

মা ক্ষমতায় আসার পরই জয়ের পোয়াবারো
আওয়ামী লীগ মতায় আসার পর মা যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন, তখুনি জয় ব্যবসা শুরু করলেন। তার ব্যবসা ছিল টেক্সাস ভিত্তিক ইনফোলিংক ইন্টারন্যাশনাল (নভেম্বর ’৯৮ থেকে মার্চ ’০১) এবং নোভা বিডি ইন্টারন্যাশনাল এলএলসি (মে ’৯৮ থেকে আগস্ট ২০০১) এর সঙ্গে। সমুদ্রতল দিয়ে ক্যাবল প্রজেক্টে নোভা বিডি ইন্টারন্যাশনালের এর মাধ্যমে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল SEAMEWE-৪ -এর সঙ্গেও। কোনো এক মাহবুব রহমানকে সঙ্গী করে জয় টাইকো কম্যুনিকেশনের (ইউএসএ) সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।

২০০৫-এর মার্চে জয় ওয়াজেদ কনসাল্টিং ও সিম গোবাল সার্ভিস নামের আরও দুটো কম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে তা হয়েছিল আওয়ামী লীগের মতা চলে যাওয়ার পর। মজার বিষয় হল, এ দুটো কোম্পানির বার্ষিক বিক্রয়ের পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ৬১ হাজার ও ৩৫ হাজার ডলার। তারপরও জয় ২০০৬-এর ১২ মে তার নিজের নামে ৩৮১৭ বেল ম্যানর কোর্ট, ফলস চার্চ, ভার্জিনিয়া- এ ঠিকানায় ১০ লাখ ডলার দামের একটি বাড়ি কেনেন। এমনকি সেই বাড়ির মালিকানায় তার স্ত্রীর নাম ছিল না। তিনি ২ লাখ ডলার নগদ ও বাকি টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করেন। বাড়ির আসল মূল্য লুকাতে এখানে চতুরতার পরিচয় দিয়েছেন জয়। তার আগে অবশ্য জয় তার স্ত্রীসহ যৌথ মালিকানায় ৭ লাখ ৪৯ হাজার ডলার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আরেকটি বাড়ি কিনেছিলেন।

ব্যবসা যেন এক কাপ চা
শেখ হাসিনা মতায় আসার পর জয়ের বোন সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের (পুতুল) স্বামী খন্দকার এম হোসেনও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা শুরু করেন। তবে কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি তার ব্যবসা গুটিয়ে নেন। তার ব্যবসাগুলোর মধ্যে উলেখযোগ্য ছিল, বাংলাদেশ মেটাল এন্ড পাইপস ট্রেডিং কর্পোরেশন, সোনালী ইনকর্পোরেশন, ডগস হোলসেল ইনক, আফসানা ইনক, এবং জাম্পি কর্পোরেশন। মনে হতে পারে, তাদের দুজনের (জয় ও খন্দকার এম হোসেন) কাছে ব্যবসাটা এক কাপ চায়ের মতোই। তবে দুজনের কেউই ব্যবসায় খুব একটা অর্থের মুখ দেখেননি। অথচ ব্যবসায় দুজন আর্থিক সঙ্কটে ভূগেছেন, এমনটাও শোনা যায়নি। হয়তো বা মায়ের আশীর্বাদেই।

যুক্তরাষ্ট্রে পুতুল ও তার স্বামীর তিনটি বাড়ি
সায়মা ওয়াজেদ হোসাইন, ডাক নাম পুতুল। শেখ হাসিনার কন্যা ও জয়ের ছোট বোন। স্বামী খন্দকার মাহাবুব হোসেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে তার উলেখযোগ্য পরিমাণে সম্পদ রয়েছে। হুট করে নয়, বিভিন্ন সময়ে ধীরেসুস্থেই তারা একটি একটি করে সম্পদের মালিক বনেছেন। আর এ কারণেই সব সময় আলোচনা-সমালোচনার আড়ালে থেকেছেন তারা। ব্যবসায়ে লাভের পরিমাণ নামমাত্র দেখালেও পুতুল ও তার স্বামী খন্দকার মাহাবুব বাড়ি কিনেছেন লাখ ডলার দিয়ে। তাও একটি নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ফোরিডাতে তাদের দুজনের নামে রয়েছে তিনটি বিলাসবহুল বাড়ি।

৪৫৬ নর্থ বে পয়েন্ট ওয়ে, জ্যাকসনভিল, ফোরিডা। এটি একটি ছোট বাসভবন। মালিকানা পুতুল ও তার স্বামী দুজনেরই। ২০০৫-এর ১ নভেম্বর ২ লাখ ৪৫ হাজার ডলার ব্যয়ে তারা এটি মেরিল এন্ড প্রিসসিলা কিংয়ের কাছ থেকে কিনেছিলেন।
৮৪৫ ইয়র্ক ওয়ে, মেইটল্যান্ড, ফোরিডা। এটিও একটি ছোট পরিবার ঘরানার বাড়ি। মালিক দুজনেই। মূল্য ৩ লাখ ১১ হাজার ডলার।


২০৬৫ ডবলিউ ১১৯ এভিনিউ, মিরামার, ফোরিডা। এ ভবনটিরও মালিক স্বামী-স্ত্রী। কেনা হয়েছিল ’৯৮’র ২৮ অক্টোবর। বাড়িটির দাম তখন ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩শ ডলার।

মরণনেশায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা

· 0 মন্তব্য(গুলি)

দেশে মাদকাসক্ত নারীর সংখ্যা আশগ্ধকাজনকহারে বাড়ছে। এমনকি বিভিল্পম্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরাও এই মরণনেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে, দেশে প্রায় ৫০ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। এদের ৯১ শতাংশই কিশোর ও তরুণ। এছাড়া দেড় লাখ কিশোরী-নারীও বিভিল্পম্ন ধরনের মাদকে আসক্ত। মাদক নিরসনে উদ্যোগী সরকারি ও বেসরকারি বিভিল্পম্ন সংস্ট্থা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মাদকাসক্তদের সঙ্গে আলাপ করে এবং নিজস্ট্ব অনুসল্পব্দানে নারী মাদকাসক্তদের সমঙ্র্কে তথ্য পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগল্পম্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়, বদরুল্পেম্নসা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিসহ বিভিল্পম্ন উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার ছাত্রী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে।
মাদক নিয়ন্পণ অধিদফতরের সামঙ্্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের মাদকাসক্ত ৫০ লাখ মানুষের মধ্যে এক লাখের বেশি বসবাস করছেন ঢাকায়। এদের মধ্যে শতকরা প্রায় ১০ জন অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজারই হচ্ছে কিশোরী, তরুণী ও মহিলা। মাদকাসক্ত নারীর দুই-তৃতীয়াংশই স্ট্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। এক্ষেত্রে ইংরেজি মিডিয়াম স্ট্কুল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর সংখ্যাই বেশি। যৌনকর্মীদের একটি বড় অংশও মাদকাসক্ত। কিছু গৃহবধহৃও রয়েছেন মাদকাসক্ত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কৌতূহল, পারিবারিক অশানস্নি, প্রেমে ব্যর্থতা, বল্পব্দুদের কু-প্ররোচনা, অসৎ সঙ্গ, হতাশা, আকাশ সংস্ট্কৃতির প্রভাবসহ নানাবিধ কারণে মেয়েরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। বিভিল্পম্ন সামাজিক প্রতিবল্পব্দকতার কারণে মাদকাসক্তদের মাত্র ৫ শতাংশ চিকিৎসা নিতে আসে।

ইউনিসেফের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের শতকরা ১৫ ভাগ নারী ধহৃমপান করে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর স্ট্বাস্ট্থ্য ও জনমিতিক জরিপে দেখা যায়, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের শতকরা এক ভাগ ধহৃমপানে আসক্ত। জাতিসংঘের এক জরিপে দেখা যায়, দেশের অনস্নত ৬৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে মাদকাসক্তির শিকার। তাদের মধ্যে ৮৭ ভাগ পুরুষ এবং ১৩ ভাগ নারী।

এছাড়া মাদকবিরোধী সংগঠন 'লাইফ' সমঙ্্রতি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হোসদ্বেলে থাকা ৪৬৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর ওপর এক জরিপ চালায়। এদের বয়স ১৫ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ১৩০। দেখা গেছে, হোসদ্বেলে থাকা এসব ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগই বিভিল্পম্নরকম মাদকে আসক্ত। সিগারেটে আসক্তদের মধ্যে শতকরা ৫৫ জন ছাত্র এবং প্রায় ৮ ভাগ ছাত্রী। অ্যালকোহলে আসক্ত প্রায় ১৪ ভাগ ছাত্র এবং ৪ ভাগ ছাত্রী। ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা ও বিভিল্পম্নরকম ঘুমের ট্যাবলেটে আসক্ত প্রায় ২ ভাগ ছাত্রী। চরস ও ভাং দিয়ে নেশা করে প্রায় ১২ ভাগ ছাত্রী। তবে রাজধানীতে তরুণী ও যুবা নারীদের হেরোইন গ্রহণের ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায় সায়েদাবাদ সিটি পল্ক্নী, মোহাম্মদপুর বস্টিস্ন, মিরপুর পল্ক্নবীর বস্টিস্নতে। তথ্যানুসল্পব্দানে দেখা যায়, শুধু সায়েদাবাদ সিটি পল্ক্নীতে ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসেই নারী হেরোইনসেবী পাওয়া গেছে ৬৩ জন। এদের অধিকাংশেরই বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানসিক স্ট্বাস্ট্থ্য ইনসদ্বিটিউটের অধ্যাপক বিশিষদ্ব মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল বলেন, একজন মানুষের জন্য বিশেষ করে টিনএজ বা কৈশোর বয়স খুবই একটি 'রিস্টি্ক পিরিয়ড'। উঠতি বয়সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কারণেও অনেক সময় মেয়েদের মাদক গ্রহণ করতে দেখা যায়। আর মেয়েরা তুলনামহৃলকভাবে ছেলেদের চেয়ে বেশি আবেগপ্রবণ ও নরম মনের হয় বলে তাদের মানসিক প্রতিত্রিক্রয়াও হয় দ্রুত।

এদিকে মাদক নিরাময় কেন্দ্র নিউ মুক্তি ক্লিনিকের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের শতকরা ৯০ ভাগই মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্টম্নাতক ও স্টম্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী। বিশেষজ্ঞ ও মাদকাসক্ত কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা সাধারণত ফেনসিডিল, হেরোইন, ইনজেকশন, গাঁজা, চরস, ভাং ও ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিভিল্পম্নরকম ট্যাবলেট গ্রহণ করে থাকে। তবে অধিকাংশ মেয়েই ফেনসিডিলকে পছন্দের তালিকায় এক নল্ফ্বরে রেখেছে। আলাপ করে জানা গেছে, ফেনসিডিলের সহজলভ্যতা এবং ব্যবহারের সুবিধাই এর মহৃল কারণ। এছাড়া শহরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ধনী এলাকায় ইয়াবাসহ অন্যান্য দামি নেশাজাত দ্রব্যের সহজলভ্যতা মাদকাসক্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ বলে চিহিক্রত করেছেন মাদকাসক্তরাই। অন্যদিকে ঢাকা শহরের কয়েকটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ও নেশাজাতদ্রব্য বিত্রিক্রর সঙ্ট ঘুরে স্ট্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া ছাত্রীদের মাদকদ্রব্য গ্রহণের আশগ্ধকাজনক চিত্র পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী বলেছেন, ফেনসিডিলের স্ট্বাদ মিষদ্বি। তাছাড়া খাওয়ার পর মুখে কোনোরকম গল্পব্দ থাকে না। আর হাতে পেতেও সুবিধা। তুলনামহৃলকভাবে দাম কম। এরপর রয়েছে বিভিল্পম্ন ট্যাবলেটের অবস্ট্থান। তবে ইয়াবা তুলনামহৃলকভাবে অনেক বেশি দাম হওয়ার কারণে ধনী ও বিত্তবান পরিবারের মেয়েরাই তা গ্রহণ করছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরাই ইয়াবা বেশি খাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল বলেন, বর্তমানে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া মেয়েরা বেশি মাদকে আসক্ত হচ্ছেন। জীবনকে উপভোগ করতে গিয়ে বল্পব্দুদের পাল্ক্নায় পড়ে তারা পা রাখছেন এই অল্পব্দকার জগতে। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অভিজাত এলাকার ইংরেজি মিডিয়াম স্ট্কুলের ছাত্রীদের মধ্যে এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

সমকালের সঙ্গে আলাপকালে মাদকাসক্তদের কেউ কেউ বলেছেন, নিছক শখের বশে 'টেসদ্ব' করতে গিয়ে ত্রক্রমেই বিভিল্পম্ন নেশার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছেন তারা। অধিকাংশ মেয়েই বলেছেন, তারা এই মাদকদ্রব্য পান ছেলে বল্পব্দুদের কাছ থেকে। তাছাড়া ইদানীং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনেকেই মাদক কেনেন। তারা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্দ্বর, মুহসীন হলের গেট, মধুর ক্যান্টিন এলাকা, টিএসসি, সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের সামনের রাস্টস্নায় সল্পব্দ্যার পর থেকে বিভিল্পম্নরকম মাদক কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়া রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পেছনে চন্দনের খুপরি দোকান, বিএনপি বস্টিস্ন, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, পিলখানা গণকটুলি, তেজগাঁও রেল বস্টিস্ন-বাজার, এফডিসি গেট, খিলগাঁও রেল গেট, টিটিপাড়া, কমলাপুর রেলসদ্বেশনের পেছনের রাস্টস্না, শ্যামলী মেথর পট্টি, মিরপুর সদ্বেডিয়াম ও মাজার এলাকা, মিরপুর চিড়িয়াখানা এলাকা, ঢাকা কমার্স কলেজের সামনে, মিরপুর ১১ নং বিহারী পট্টি এবং পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার, বাবুবাজার, আলুবাজারের লোহার মার্কেটের পেছনেসহ বেশ কয়েকটি সঙ্টে মাদক কিনতে পাওয়া যায় বলে জানান তারা।

নেশাগ্রস্টস্ন কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে তারা কখনো কখনো চা-পান বিত্রেক্রতা ও টোকাইদের কাছ থেকে নেশাদ্রব্য কেনেন। প্রতি বোতল ভেজাল ফেনসিডিল বা ডাইলের দাম বর্তমানে ২০০ থেকে ২৮০ টাকা। আসল ফেনসিডিল প্রায়ই পাওয়া যায় না বলে জানান ছাত্রীরা। পেলেও দাম নেয় প্রায় হাজার টাকা। ভেজাল হেরোইন প্রতি পুরিয়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। মিক্সড গাঁজা ৫-১০ টাকা প্রতি সদ্বিক। ইয়াবা ট্যাবলেট প্রতিটি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। পাগল পশু শানস্ন করতে ব্যবহূত টিটিজেসি ইনজেকশন প্রতিটি ২০-৩০ টাকা এবং প্যাথেডিন ইনজেকশন ২০০-৩০০ টাকা। অবশ্য কোনটা কতটুকু আসল সে সমঙ্র্কে ত্রেক্রতা-বিত্রেক্রতা কেউই গ্যারান্টি দিতে পারে না বলে জানান তারা।

নিউ মুক্তি ক্লিনিকের প্রধান নির্বাহী মোঃ সানাউল হক বলেন, আজকাল মাদকেও ভেজাল হচ্ছে। এমনিতেই যে কোনো মাদকের পাশর্্বপ্রতিত্রিক্রয়া অত্যনস্ন ভয়গ্ধকর, তার ওপর এসব ভেজাল মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে আসক্তরা আরো ভয়গ্ধকর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ওই ক্লিনিকে কথা হয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী ইন্দিরার (৩০) (ছদ্মনাম) সঙ্গে। চৌদ্দ বছর ধরে নানারকম মাদক সেবন করছেন তিনি। মাদকের কারণে দু'বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন। প্রথমদিকে দীর্ঘদিন প্যাথেডিন নিয়েছেন। শরীরে তার এখন আর কোনো শিরা খুঁজে পাওয়া যায় না বলে বর্তমানে হেরোইন ও ইয়াবা খাচ্ছেন ইন্দিরা। বারিধারার এক বিত্তবান পরিবারের একমাত্র সনস্নান ইন্দিরা জানান, ১৯৯৫ সালে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে আমেরিকায় স্ট্থায়ী হয়ে গেলে মায়ের দুঃখ দেখে মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রথম ফেনসিডিল খেতে শুরু করেন। তার ভাষ্য মতে, তারপর একদিন এক বল্পব্দু জানাল প্যাথেডিন নিলে দুনিয়া ভুলে থাকা যায়। তারপর থেকে একটানা ৪ বছর প্যাথেডিন নিয়েছেন। তিনি জানান, এক সময় প্রতিদিন তিনবেলা তাকে ৩০টি প্যাথেডিন নিতে হতো। প্রতিদিন খরচ হতো ১৫ হাজার টাকা। ১৬ বছরে মাদকের পেছনে তার খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এছাড়া বিভিল্পম্ন সময় ২ শ' ভরি স্ট্বর্ণালগ্ধকার বল্পব্দক দিয়েছেন মাদক কেনার জন্য। এখন প্রতি মাসে মাদকের পেছনে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকার ওপরে। ইন্দিরা বলেন, অনেক চেষদ্বা করেছি, ছাড়তে পারিনি। এক শ'বারেরও বেশি চিকিৎসা নিয়েছি। কিন্তু তারপর আবারো মাদক নিয়েছি। একটি মাদকাসক্ত সনস্নান যে কীভাবে একটি পরিবারকে শেষ করে দেয় তার জ্বলনস্ন উদাহরণ আমি। তিনি জানান, তারা প্রায় ১৪/১৫ জন বল্পব্দু মিলে একসঙ্গে মাদক নেন। এর মধ্যে ৮ জনই মেয়ে। এদের সবাই রাজধানীর উচ্চবিত্ত পরিবারের সনস্নান। তাদের মধ্যে ৪ জন দেশের স্ট্বনামধন্য শিল্কপ্পপতির মেয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর একজন ছাত্রী জানান, আড্ডার আসরে মজা করতে গিয়ে প্রথম গাঁজা খান। তারপর কখন যে আসক্ত হয়ে পড়েন বুঝতে পারেননি। এখন নিয়মিত হেরোইন আর ইয়াবা ট্যাবলেটও খান। প্রায় দুই বছর ধরে খাচ্ছেন। এই অভ্যাস ছাড়তে চান কিন্তু পারছেন না। শরীরও খারাপ হয়ে গেছে।

রাজধানীর একটি নিরাময় কেন্দ্রে কথা হয় এইচএসসি পড়ূয়া সীমির (ছদ্মনাম) সঙ্গে। সে বলে, বাবা-মার সঙ্গে ঝগড়া করে আমি প্রথম ফেনসিডিল খাই। এক বল্পব্দু আমাকে ফেনসিডিল এনে দেয়। তারপর থেকে এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। শেষ পর্যনস্ন বল্পব্দুরাই আমাকে সরবরাহ করে। কিন্তু এখন আর খেতে চাই না। আমি সুস্ট্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে চাই।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সামাজিক বিশৃগ্ধখলা, নৈতিকতাহানি, আকাশ সংস্ট্কৃতির প্রভাব এবং পারিবারিক ও বিভিল্পম্ন হতাশার কারণে এই প্রজন্মের মেয়েরা বেশি মাদকাসক্ত হচ্ছে। হেরোইন ও ইয়াবার মতো ক্ষতিকর ও ভয়াবহ মাদকের সহজপ্রাপ্যতা এজন্য দায়ী। আগে হাসপাতালের আউটডোরে মাদকাসক্ত রোগী হাতে গোনা দু'চারজন পাওয়া যেত। আর বর্তমানে রোগীর সংখ্যা শতকরা ১০ ভাগের বেশি। এরা ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন কিংবা অন্যান্য মাদকে আসক্ত।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন সদ্বাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞানী মাহমুদা ইসলাম বলেন, সাধারণত দেখা যায় কম বয়সের কারণে একে অন্যের কথায় বেশি প্রভাবিত হয়। আর আবেগ বেশি থাকার কারণে সহজেই যে কোনো বিষয়ে ভেঙে পড়ে। ফলে একটি নেতিবাচক পরিস্টি্থতিতে পড়লে তা থেকে নিজেকে আড়াল করতে গিয়ে অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। পারিবারিক অশানস্নি, বাবা-মার নেতিবাচক সমঙ্র্ক বা ব্রোকেন পরিবারের কারণেও অনেকে এ পথে চলে যায়। তবে গৃহিণী মেয়েদের মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে অনেক সময় দেখা যায় স্ট্বামীরা তাদের স্ট্পীদের মাদকাসক্ত করছে।

ডা. মোহিত কামাল জানান, মাদকাসক্ত মেয়েদের বিকলাঙ্গ সনস্নান জন্ম দেওয়ার আশগ্ধকা খুব বেশি। আসক্ত মেয়েরা পাইলসসহ নানারকম রোগে আত্রক্রানস্ন হতে পারে। তাদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য অস্ট্বাভাবিক হয়ে পড়ে। অনেকের ক্ষেত্রে মাদক সরাসরি মস্টিস্নষ্ফ্কে হামলা চালায়। অধিকাংশ নারী এক সময় যৌনত্রিক্রয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, কেউবা মা পর্যনস্ন হতে পারে না। কোনো মেয়ে যদি গর্ভাবস্ট্থায় মাদক সেবন করে তাহলে তার সনস্নানেরও মাদকাসক্ত হওয়ার আশগ্ধকা থাকে।

তিনি আরো জানান, ফেনসিডিল বা হেরোইন নিয়মিত খেলে পরিপাকতন্প নষদ্ব হয়ে যায়। শরীরের রাসায়নিক ত্রিক্রয়া বাধাগ্রস্টস্ন হয়। মানসিক সুস্ট্থতা হারিয়ে যায়। ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত ব্যক্তি পাগলও হয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রে সিগারেট মাদকাসক্ত হওয়ার প্রধান কারণ। পরে এক ডোজ দুই ডোজ করে অন্য কোনো নেশা যোগ হয়। ত্রক্রমেই ডোজের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর নেশারুদের অবস্ট্থাও খারাপ হতে থাকে। ত্দ্বক, ফুসফুস, লিভার, কিডনিসহ শরীরের অভ্যনস্নরীণ অর্গানগুলো আস্টেস্ন আস্টেস্ন নষদ্ব হয়ে যায়। তিনি জানান, মাদকাসক্তদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। এদের বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তবে ১৫ বছরের নিচের কিশোর-কিশোরী এমনকি শিশুরাও আজকাল মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের গড় বয়স মাত্র ২০ বছর।

ধূমপান প্রতিরোধে ৫শ মিলিয়ন ডলার দিলেন বিল গেটস ও ব্লুমবার্গ

· 0 মন্তব্য(গুলি)

বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী বিল গেটস এবং নিউইয়র্ক সিটির মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ ৫শ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছেন ধূমপান থেকে মানুষকে বিরত হওয়ার প্রকল্পে। ২৩ জুলাই নিউইয়র্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তারা দুই জন অঙ্গীকার করেন। বরাদ্দকৃত অর্থ আগামী ৪ বছরে ব্যয় করা হবে সারাবিশ্বে। প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে বিশ্বের খ্যাতনামা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান 'বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন' ধূমপান বিরোধী অভিযানে ১২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এ অর্থ ৫ বছরে ব্যয় করার কথা। একইভাবে নিউইয়র্কের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও সিটি মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান 'বুমবার্গ ফাউন্ডেশন'ও ৪ বছরে ১২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, চলতি একুশ শতকে সারাবিশ্বে ধূমপানজনিত রোগে এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৃতু্য হবে। এর সিংহভাগই হচ্ছে গরিব এবং মাঝারী আয়ের দেশের নাগরিক। কেননা গরিবেরাই অধিক হারে ধূমপান করছেন বলে সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় জানা গেছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে সারাবিশ্বে ধূমপান বিরোধী অভিযানে ব্যয় হচ্ছে মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলার। উপরোক্ত দুটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ যোগ হয়ে তা দাঁড়াবে বার্ষিক ১২৫ মিলিয়ন ডলার যার মাধ্যমে এ কার্যক্রম জোরদার করা সম্ভব হবে।

ওরা সবাই প্রতারণার শিকার!

· 0 মন্তব্য(গুলি)

দুই ধারে সবুজ গাছের বেষ্টনী। ওপর দিয়ে ট্রেন চলছে। এর ঠিক নিচে গালে হাত দিয়ে বসে আছে চুয়াডাঙ্গার হারম্নন। ব্রিজের নিচে পচা দুর্গন্ধময় পানির পাশেই তার নিবাস। সোনার হরিণের খোঁজে স্বদেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় এসেছে বহুদিন আগে। চাকরি জোটেনি। তাই মাথার ওপর দিয়ে যখন ট্রেনের ঝম ঝম আওয়াজ মিলিয়ে যাওয়ার মতই হারিয়ে যায় হারম্ননের স্বপ্নসাধ।

শুধু হারম্নন নয়, এরকম অবস্থা আরো অনেকের। কুয়ালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছেই কয়েকশ' বাংলাদেশী এভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন গুনছে। এদের যেমন খাওয়ার সুবিধা নেই তেমনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার ব্যবস্থাও সীমিত। একটি মাদুর বিছিয়ে দিনের পর দিন শুয়ে-বসে সময় পার করছে তারা। মানবেতর এই জীবন যাপন চোখে না দেখলে অনুধাবনযোগ্য নয়। এদের সবাই প্রতারণার শিকার। বাংলাদেশ থেকে এদের যে কাজ এবং বেতনের প্রতিশ্রম্নতি দেয়া হয়েছিল তা দেয়া হয়নি। কাজ করে খেয়ে পরে থাকার বিকল্প কোন ব্যবস্থাও নেই। এখানে রিক্রুটিং এজেন্সী ও তাদের দালালদের খপ্পরে পড়ে আজ তাদের এই দুরবস্থা।

প্রতারিত বাংলাদেশীরা জানিয়েছে, দুই লাখেরও বেশি টাকা দিয়ে তারা এদেশে এসেছে। কিন্তু কাগজেপত্রে স্বাৰর করছে চুরাশি হাজার টাকার। এখানে এনে এজেন্টরা লাপাত্তা হয়ে যায়। আবার কখনো কখনো অসত্দিত্বহীন কোম্পানির নাম করেও বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে আসা হচ্ছে।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তাও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, গত কয়দিন আগেও এক হাজার লোক মালয়েশিয়ায় এসেছে। যে কোম্পানিতে তারা এসেছে, আসলে সেটি এখানে নিবন্ধনকৃত একটি কোম্পানি মাত্র। বাসত্দবে এর কোন অসত্দিত্ব নেই। কোম্পানির যে ফোন নম্বর দেয়া হয়েছিল সেটিও ছিল একটি ফোন-ফ্যাক্সের দোকানের নম্বর।

হতভাগ্য বাংলাদেশীদের নিয়ে এখানে রমরমা বাণিজ্য চলে। এক শ্রেণীর দালাল এদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে বহু টাকা কামাই করেছে। এরা কয়েক মাসের জন্য যে কোন একটি কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ করে দেয়। বিনিময়ে দু'তিনশ' রিঙ্গিত নিয়ে নেয়।

চুয়াডাঙ্গার হারম্ননের মত এদের অনেকেই বাধ্য হয়ে পাম বাগানে কাজ নেয়। সেখানে শারীরিক নির্যাতন থেকে শুরম্ন করে ঠিকমত পারিশ্রমিকও দেয়া হয় না। এ রকম অবস্থায় হারম্নন ১৬ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে পেনাং থেকে কুয়ালালামপুর এসেছে ভাল কোন কাজের আশায়। কিন্তু অন্যদের সঙ্গে তারও ঠাঁই হয়েছে ঐ ব্রীজের নিচে।

প্রতারণার শিকার এসব বাংলাদেশীদের হাতে তাদের পাসপোর্টও নেই। এজেন্টরা পাসপোর্ট রেখে দিয়েছে। চাইলে টাকা দাবি করে। এজেন্টদের ভয়, প্রতারিতরা দেশে ফিরে গেলে তাদের আত্মীয়-স্বজনের ওপর চড়াও হয় কিনা।

কথা বলতে বলতে প্রায় কেঁদেই ফেলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফোরকান। ঠিকমত খেতে পান না অনেক দিন। বললেন- শুরম্নতে এক আপা আমাদের কষ্ট দেখে সবাইকে খাবার দিয়েছিলেন। পরে শুনলাম, হাইকমিশনারের লোকজন নাকি নিষেধ করেছে তাকে। তারপর কেউ আর খাবার নিয়ে আসছে না।

দূতাবাসের কর্মকর্তারা খোঁজ নেন কিনা জানতে চাইলে এখানকার সবাই এক বাক্যে জানান, তাদের কাছে গেলে দুর্ব্যবহার করে। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বিরম্নদ্ধে সবার এনত্দার অভিযোগ। যদিও এসব অভিযোগ ঠিক নয় বলে জানান কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ । বিশ্বে আমরা কি পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই?

· 0 মন্তব্য(গুলি)

মিরাজুর রহমান

প্রবাসে আছি প্রায় ৩ বছর । কর্মসূত্রে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সাথে কথাবার্তা বলার সুযোগ হয় । শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের বাংলাদেশ বিষয়ক সংবাদের ই-মেইল এ্যালার্ট এর সাবস্ক্রাইবার হওয়ার সুবাদে বিশ্বে যে কোন প্রান্তে বাংলাদেশ নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশিত হলে তা সাথে সাথে পড়ার চেষ্টা করি । বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বের সাধারণ ধারণা এইসব সংবাদ থেকে মোটামুটি বোঝা যায় । আর এইসব সংবাদের উপর ভিত্তি করেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মাঝে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ব্যাপারে একটি সাধারণ ধারণা পাওয়া যায়।

বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের প্রধান পরিচয়গুলি হলো -
১। হতদরিদ্র দেশ যেটি প্রতি বছর বন্যা আর ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয় ।
২। মধ্যপন্থী উদার মুসলিম দেশ যেখানে উগ্র মৌলবাদীরা তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করছে ।
৩। বিশ্বের সবচেয়ে দূর্ণীতিপরায়ণ দেশগুলির একটি ।
৪। রাজনৈতিক সহিংসতায় পরিপূর্ণ একটি দেশ যেখানে গণতন্ত্র অত্যন্ত ভঙ্গুর । আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অত্যন্ত দুর্বল ।
৫। ব্যবসা বানিজ্যের প্রয়োজনীয় সুবিধা এবং অবকাঠামোবিহীন একটি দেশ যেখানে লালফিতার দৌরাত্ব অনেক বেশী ।

এ বাইরে কিছু পজেটিভ পরিচয়ের মধ্যে আসে
১। সাধারণভাবে শান্তিকামী জনগণ যারা খুব অল্পতেই সন্তষ্ট এবং সুখী । (সূত্র : বিবিসি জরিপ)
২। ক্রিকেটপাগল একটি দেশ যারা এই একটি মাত্র খেলায় বিশ্বমানের কাছাকাছি পৌছাতে পেরেছে।

প্রথম ৫টি পরিচয় (২য়টির আংশিক মধ্যপন্থী উদার মুসলিম দেশ ব্যতীত) কোন স্বাধীন ও আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন জাতির জন্য সুখকর হতে পারেনা । কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে এই পরিচয়গুলিকে প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছি । আমাদের অসৎ ও অকর্মণ্য শাসকগোষ্ঠী (উর্দিধারী এবং উর্দিবিহীন) এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলেও তাদের প্রতি আমাদের অন্ধ রাজনৈতিক সমর্থনকেও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই ।

দেশের কৃষক সমাজ, নিম্নআয়ের মানুষরা এবং পরিশ্রমী মিডল ক্লাস বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা যতই পাল্টানোর চেষ্টা করুকনা কেন এই সার্বিক ভাবমূর্তির কারণে বাংলাদেশ সামনে আগাতে পারছেনা । এর ফলে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যারা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিলো তারা দ্রুত গতিতে সামনে আগাতে থাকলেও আমরা দিন দিন আরো পিছিয়ে পড়ছি । আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিল্পায়ন সকলক্ষেত্রেই এই নেগেটিভ ভাবমূর্তির জন্য চড়া মুল্য দিতে হচ্ছে । আমাদের প্রতিবেশী দেশের নেগেটিভ প্রচারণাকে অনেকে আমাদের ভাবমূর্তি সংকটের জন্য আংশিকভাবে দায়ী করেন । কিন্তু প্রতিবেশীর কর্মকান্ডের সমালোচনা করার চাইতে নিজেদের সংকট মোকাবেলার জন্য নিজেদের প্রচেষ্টা অনেক বেশী কার্যকর হবে ।

জাত্যাভিমানের কারণে এর অনেক কিছুই আমরা স্বীকার করতে চাইনা । কিন্তু উটপাখীর মত বালিতে মুখ গুজে থাকলেই সমস্যার সমাধান হয়না । এর জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হয় ।

দেশে এবং বিদেশে অনেক বাংলাদেশী আছেন যারা মেধা এবং কর্মদক্ষতার জোরে বিশ্বের অনেক দেশের নাগরিকদের পিছনে ফেলে সম্মানজনক অবস্থানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন । এর সাথে সাথে তারা বাংলাদেশকেও প্রতিষ্ঠিত করছেন । কিন্তু সার্বিকভাবে তাদের এই উদ্যোগ বাংলাদেশ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা পরিবর্তনে খুব কমই ভূমিকা রাখতে পারছে ।

তাহলে সমাধান কি? নাকি আমরা এসব ভাবমূর্তিকে তোয়াক্কা করিনা । দেশ গোল্লায় যাক, তাতে আমার কি? আমার নেতা নেত্রী ক্ষমতায় থাকলেই হলো বা আমার হালুয়া রুটির বন্দোবস্ত হলেই হলো । একটি দেশের শিক্ষিত সমাজের মধ্যে দেশ নিয়ে এইরকম সাধারণ উদাসীনতা আসলেই পীড়াদায়ক।

১/১১ পরিবর্তনের পরে প্রথম প্রথম অনেকেই ভেবেছিলেন এবার মনে হয় একটা পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে । কিন্তু প্রচন্ডভাবে আশাবাদীদেরও মোহভঙ্গ হতে বেশী সময় লাগেনি । দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে গুণগত কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা সেটা বলাটা কষ্টকর তবে সাধারণ মানুষের জীবনধারণ যে আগের চেয়ে কঠিনতর হয়েছে সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ।

সামনের বছরগুলিতে বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাবে । আমরা কি আদৌ এর জন্য কোন প্রস্ততি নিচ্ছি? নাকি বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি সংকটকে যেমন আমরা সহজেই উপেক্ষা করি, গায়ে মাখিনা, সেরকম করে সামনের পরিস্থিতির ব্যাপারেও একই দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করি? যদি আমরা সেরকমই মনে করি তাহলে এর জন্য অনেক বেশী চড়া মুল্য দিতে হতে পারে আমাদেরকে। নীরব নয়, সরব দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়াও বিচিত্র হবেনা ।

আর শেষ পর্যন্ত যদি সেরকম অবস্থার মধ্যে আমাদের পড়তেই হয় তাহলে আমাদের নেগেটিভ ভাবমূর্তি আরো প্রকট হবে, আরো পেছাতে থাকবো আমরা ।

পরিবর্তন ঘটানো প্রয়োজন । কিন্তু কোন পথে আসবে সেই পরিবর্তন? আমাদের সচেতনভাবে ঠিক করতে হবে বিশ্বে আমরা নিজেদেরকে কি পরিচয়ে পরিচিত করতে চাই!! দেশের তরুণসমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে এই পরিবর্তন ঘটানোর জন্য। এমন নয় যে সামনে উদাহরণ নেই । দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ার দেশগুলির উদাহরণতো হাতের কাছেই আছে । এমনকি প্রতিবেশী শ্রীলংকা প্রবল জাতিগত সংঘাতের মধ্যেও অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে । উদ্যোগী হলে আমরাও নিশ্চয়ই পারবো ।

সবার প্রথমে আমাদের তরুণ সমাজকে বুঝতে হবে যে এই পরিবর্তনটি প্রয়োজন । প্রায় সময়ই হতাশ হয়ে যাই কারণ পরিস্থিতির আশু পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা দেখিনা । তারপরও আশায় বুক বাধি, বারংবার হতাশ হবার জন্য।

(Writer:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক)

ঋণের বেড়াজালে তৃণমূল নারী : তাহাদের দুঃখগাথা

· 0 মন্তব্য(গুলি)

বিশ্বব্যাপী যখন ৰুদ্র ঋণ প্রকল্পকে মডেল হিসেবে নেয়া হচ্ছে তখন বাংলাদেশে ৰুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে অনেকে নিজের উন্নয়ন তো দূরের কথা সহায়-সম্বল হারিয়ে পথের ভিখারি পর্যনত্দ হচ্ছেন। অনেকে কিসত্দির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে এনজিও কর্মীদের ধিক্কার ও হুমকির কারণে আত্মহত্যা করছেন। এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। অধিকাংশ এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো শুধু তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের ৰুদ্র ঋণ প্রদান করে। যেসব নারীদের ঋণ প্রদান করা হয় তাদের আগে থেকে আয় বর্ধকমূলক কাজের ওপর কোনো প্রশিৰণ থাকে না। এনজিও কর্মীরা তো তাদের টার্গেট পূরণ করতে পারলেই বেতন পাবেন। তাই তারা যাচাই ছাড়া যাকে তাকে ঋণ প্রদান করে থাকেন।

অধিকাংশ ঋণ গ্রহীতা নারীরা ঋণ নিয়ে তাদের স্বামীর হাতে তুলে দেন। দেখা গেছে স্বামী কোনো ৰুদ্র ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে টাকা ইচ্ছানুযায়ী খরচ করে ফেলেন। ফলে কিসত্দির দায় এসে পড়ে নারীর ঘাড়ে। কিসত্দির টাকা না দিতে পারলে নারীকে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা দেয় এনজিও কর্মীরা। এমনও দেখা গেছে অপমান সহ্য করতে না পেরে অনেক নারী আত্মহত্যা করেন। অনেকে পরিবার আবার কিসত্দির টাকা পরিশোধ করতে বসতভিটা পর্যনত্দ বিক্রি করেন। অথচ এনজিওগুলোর ঋণ নীতিমালায় রয়েছে এক এনজিওর সদস্য অন্য এনজিওর সদস্য হতে পারবে না। কিন্তু এনজিও কর্মীরা তাদের ঊধর্্বতন কতর্ৃপৰের চোখে ধুলো দিয়ে নিজের চাকরি টিকানোর জন্য সেই নীতিমালাকে অগ্রাহ্য করেন।
মোসা. মুনা বিবি (৩৭) একজন গৃহিণী। স্বামী বর্গাচাষি। দুই মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে সংসার। পরের জমি চাষাবাদ করে মোটামুটি সংসার চলত। গ্রামীণ ব্যাংক কার্যক্রম শুরম্ন করার পর প্রথমে ঋণ নেয়। কিন্তু এক সময় ব্যাঙের ছাতার মতো এলাকায় গড়ে ওঠে বিভিন্ন এনজিও। ওসব এনজিও কর্মীরা ঋণ প্রদানের লৰ্যে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকেন। মুনা বিবি প্রায় ৭টি এনজিও থেকে ৰুদ্র ঋণ নেন। স্বামীর একমাত্র সম্বল দুটি হালের গরম্ন। হঠাৎ একটি হালের গরম্ন মারা যায়। এতে স্বামীও বেকার হয়ে যায়। কারণ হাল কিনে বর্গা চাষ করে কোনো লাভ হয় না। জোতদারেরা সব ফসল নিয়ে যায়। তাদের এখন প্রায় দেড় লাখ টাকা দেনা হয়েছে।
এমেলি বেগম (৩৫) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার প্রত্যনত্দ অঞ্চলে স্বামী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে বসবাস করেন। স্বামী দিনমজুর। এক সময় এমেলি বেগম অন্যান্য নারীদের মতো প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংক পরে আশা, প্রশিকা, ব্র্যাকসহ কয়েকটি স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নেন। এতে স্বাবলম্বী হওয়া তো দূরের কথা ঋণের দায়ে শেষ পর্যনত্দ যুব উন্নয়ন অধিদফতর কতর্ৃক দায়ের করা মামলায় জেলহাজতে যেতে হয়। তিনি জানান, এনজিওগুলো শুধু ঋণ দিয়ে কিসত্দি আদায়ের জন্য আসে। কিন্তু ঋণের টাকা নিয়ে কী করা যায় এই বিষয়ে কেউ পরামর্শ দেয় না। ঋণ নিয়ে এখন ফেঁসে গেছি। জানি না কবে দেনামুক্ত হতে পারব।
সুখী বেগমের (৪৫) তিন মেয়ে ও চার ছেলে নিয়ে সংসার। স্বামী একজন ৰুদ্র ব্যবসায়ী। গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, প্রশিকা, ঠেঙ্গামারা সবুজ সংঘসহ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে তিনি স্বামীকে ব্যবসা করতে দেন। ব্যবসায় বড় ধরনের লোকসান হলে ভিটামাটি পর্যনত্দ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। এক সময় ঋণের দায় থেকে মুক্ত হওয়ার লৰ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের বিয়ে দিয়ে যৌতুকের টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হন। তিনি জানান, ঋণ প্রদানের সময় গ্রম্নপ তৈরির জন্য এনজিও কর্মীরা বাড়িতে ধরনা দেয়। কিসত্দি আদায়ের সময় অমানবিক আচরণও করে। তবে মাঠকর্মীদের কোনো দোষ নেই। কারণ তারা চাকরি বাঁচাতে এই অশোভন ব্যবহার করে থাকে।
ৰুদ্র ঋণের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের স্বাবলম্বী তথা আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলার নাম করে অনেক এনজিও ব্যবসা চালাচ্ছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক কতর্ৃক নিয়ম-কানুনকে অমান্য করলেও তাদের বিরম্নদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অধিকাংশ স্থানীয় এনজিও প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন পর্যনত্দ নেই। সুদের হারও অনেক বেশি। প্রতিটি এনজিওদের নীতিমালায় উলেস্নখ রয়েছে, একজন নারী একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের সদস্য হলে অন্য এনজিওতে তাকে সদস্য হিসেবে নেয়া যাবে না। কিন্তু মাঠকর্মীদের ম্যানেজাররা অন্য এনজিওদের সদস্যদেরও সদস্য করার টার্গেট দেন। এতে মাঠকর্মীরা চাকরি বাঁচানোর জন্য নিয়মনীতি অমান্য করেন। এতে যে নারীর ঋণ প্রয়োজন নেই তাকেও ঋণ নিতে আগ্রহী দেখায়। এ ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ের নারীরা অশিৰিত ও অদৰ। নেই কোনো প্রশিৰণ, নেই ব্যবসার মতো উপযুক্ত পরিবেশ। জানে না কী কাজে ব্যবহার করতে হবে ঋণের টাকা। শেষ পর্যনত্দ ঋণের সব দায় এসে পড়ে নারীর ওপর। এভাবে অনেকের সংসারও ভাঙে।


মাঠকর্মীদের বক্তব্য


শফিকুল আলম (ছদ্মনাম) রম্নরাল রি-কন্সট্রাকশন ফাউন্ডেশন (আরএমএফ) নামক একটি এনজিওতে কর্মরত। এই মাঠকর্মী বলেন, কিসত্দির টাকা আদায় করতে খুবই কষ্ট হয়। বৃষ্টি-বাদলের সময় ঋণ গ্রহীতারা কিসত্দি দিতে পারে না। অফিসের বসদের চাপের কারণে আমরা অভদ্রোচিত আচরণ করতে বাধ্য হই। কিসত্দি আদায় করতে না পারলে বেতন থেকে কেটে নেয়। অনেক সময় সদস্যরা মোবাইল, টিভি, কাঁথাসহ যাবতীয় আসবাবপত্র পর্যনত্দ পানির দরে বিক্রি করেন।


ব্র্যাক ও বাইস নামের এনজিওতে কর্মরত সাবেক এক মাঠকর্মী ফারম্নক জানান, ব্র্যাকে কাজ করতে গিয়ে মানুষের ঘরের টিন বিক্রি করে কিসত্দি আদায় করেছি। বাইস এনজিওতেও একই সমস্যা। ফলে রাগ করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুদি দোকান দিয়েছি। যাদের কোনো গতি নেই তারা ৰুদ্র ঋণ প্রকল্পে চাকরি করে।

অর্ন্তবাস চোরের বংশধর !!

· 0 মন্তব্য(গুলি)

অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড অর্ন্তবাস চোরের বংশধর। রাডের এক প্রমাতামহকে অর্ন্তবাস চুরির অভিযোগে ইংল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একটি চার্চ। এছাড়া তার আরেক দাদাকেও এক বস্তা চিনি চুরির দায়ে অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী রাডের পারিবারিক ইতিহাস জানতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গবেষণার পর অস্ট্রেলিয়ার মোরমন চার্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এই নতুন তথ্য জানিয়েছে। এ ধরনের পারিবারিক কাসুন্দি ঘেঁটে বের করার কাজে যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি ভিত্তিক মোরমন চার্চের বেশ সুখ্যাতি আছে। চার্চ তাদের গবেষণা ফলাফলে জানিয়েছে, একটি মেয়ের পোশাক ও তার অর্ন্তবাস চুরির দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাডের পঞ্চম প্রমাতামহকে ১২ বছর বয়সেই অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। চার্চের টেরি ভিনসন বলেন, পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে এ ধরনের গবেষণা আমাদের এটিই অনুধাবন করতে সাহায্য করে যে, আমাদের পূর্বপুরুষদের এনে দেওয়া ঐশ্বর্যই আজ আমরা ভোগ করছি। অস্ট্রেলিয়ায় ইউরোপীয়দের বসতি স্থাপনের ইতিহাস প্রায় শোয়া দুইশ বছরের। সে সময় ব্রিটেনের জঘন্য অপরাধীদের অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো হতো। এটা শুরু হয় ১৭৮৮ সালে। ১৮৬৮ সালে এসে এই নির্বাসন বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এক লাখ ৬০ হাজার দণ্ডিতকে সেখানে পাঠানো হয়।

চার্চ জানিয়েছে, রাডের পঞ্চম প্রমাতামহ মেরি ওয়াদে ব্রিটেনে খুবই দারিদ্রের মধ্যে জীবনযাপন করতেন। তিনি রাস্তা ঝাড়ু দিতেন এবং ভিক্ষা করতেন। ১২ বছর বয়সে ১৭৮৮ সালে তিনি একটি মেয়ের পোশাক ও অর্ন্তবাস চুরি করে ধরা পড়েন। লন্ডনের ওল্ড বেইলি আদালতের বিচারে ১৭৮৯ সালের জানুয়ারিতে ওয়াদে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। কিন্তু ৩ মাস পর আরো প্রায় ২০০ জন মহিলা অপরাধীর সঙ্গে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো হয়। এছাড়া রাডের চতুর্থ প্রপিতামহ থমাস রাডও ছিলেন চোর। এক বস্তা চিনি চুরির দায়ে সাত বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত থমাসকে ১৮০১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি আরেক চোর মেরি কাবলকে বিয়ে করেন। কাপড় চুরির দায়ে ১৮০৪ সালে কাবলকে নির্বাসন দেওয়া হয়।

আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রায় ৩ দিনের কথা

২৪ নভে, ২০০৮ · 0 মন্তব্য(গুলি)

২০০৩ এর ফ্রেব্রুয়ারী মাস। রাতের ট্রেনে চট্রগ্রাম থেকে ঢাকা যাচ্ছি চাকুরীর ইন্টারভিউয়ের জন্য। সাথে ছোট একটা লাগেজে কিছু কাপড়-চোপড়, সার্টিফিকেট আর ঠিকানা সম্ভলিত একটি ছোট ডায়রী।

ভোরের দিকে ভৈরব ক্রস করার পর ভাবলাম কিছ খাই। এদিক-সেদিক খুজে ডিমওয়ালা কে পেলাম। ৩ টাকা করে ছিল ডিম তখন। ৫ টাকার একটা নোট দিলে বিক্রেতা বললো ভাংতি নেই, দিয়ে যাচ্ছে। আমি বসে রইলাম তার অপেক্ষায়।

এর পরের ২ দিন কি হয়েছিল ভালো মনে নেই। ঝাপসা কিছু স্মুতি। এক লোক আমাকে অজ্ঞান অবস্হায় কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের মধ্যে পায়। সাথে আমার ব্যাগটি ছিল। আমার ঘড়ি, মোবাইল এবং ম্যানিব্যাগ লাপাত্তা। আমি নাকি ব্যাগের ডায়রী থেকে ওই ভদ্রলোককে একটি ঠিকানা দেখিয়ে দেই আগারগাওয়ের। আমার এক বন্ধুর ঠিকানা। সেই ভদ্রলোক ওই বাসায় পৌছে দেবার পর আমার বন্ধু, তার ভাই এবং বাবা মিলে ধরাধরি করে আমাকে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। ইর্মাজেন্সী ভর্তি করার পর ফ্লোরে ফেলে রাখা হয়। আমার বন্ধর কাছ থেকে খোজ পেয়ে আমার এক আত্মীয় ডাক্তার এসে পেট ওয়াশ করান। রাত নাগাদ বন্ধুর বাসায় ফেরত আসি। পরদিন দুপুর নাগাদ চট্রগ্রাম থেকে আসা মামার সাথে আবার চট্রগ্রাম ফেরত আসি।

বাসায় যাবার পরও প্রায় ১ দিন পর্যন্ত কি হয়েছে কিছুই মনে নেই। আমার বন্ধু বলছিল অসুস্হ অবস্হায় নাকি আমি বলেছিলাম কেউ আমার মুখে কিছু ছুড়ে মেরেছিলাম। ডাক্তাররা বলেছিল সম্ভবত: ধুতরা পয়জন।

যে ভদ্রলোক আমাকে বাসায় পৌছে দিয়েছিল, তার নাম ঠিকান কোনদিন পাইনি। আমার সেই বন্ধুটির বাবাও ২০০৫ এর দিকে ক্যান্সারে মারা যায়। সষ্ট্রা তাদের ভালো রাখুন।

হয়ত হতে পারতাম এক বেওয়ারিশ লাশ। ব্যাগটা না থাকলে।

সৃষ্টিকর্তার কাছে সবার ভালো থাকা কামনা করি।

মাতাল বিএসএফ সন্ত্রাসীদের গুলিতে মা-শিশু হত্যার পাওনা: শুধুই ক্ষমা

· 0 মন্তব্য(গুলি)

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার মাঝিপাড়া সীমান্তে গত রোববার রাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী−বিএসএফের সদস্যরা বাংলাদেশের গ্রামে ঢুকে নির্বিচার গুলি করে তিন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছেন। নিহতদের দুজন মা ও শিশু। ঘুমিয়ে থাকার সময় ঘরে ঢুকে বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের গুলি করে মারেন। তাঁদের এলোপাতাড়ি গুলিতে কমপক্ষে ১৫ জন গ্রামবাসী আহত হয়েছে। বিনা কারণে এই হামলা চালানোর সময় বিএসএফের এক সদস্য গ্রামবাসীর হাতে আটক হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী, বিডিআর ও পুলিশ সুত্র জানায়, মাঝিপাড়া সীমান্তের ৪৩৫ নম্বর মেইন পিলার থেকে ৪৩৬ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে রোববার রাত ১০টার দিকে ভারতের নয়াবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্পের দু-তিনজন সশস্ত্র সদস্য কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশের ময়নাকুড়ি গ্রামে ঢোকেন। তাঁরা কোনো কারণ ছাড়াই গ্রামের লোকজনদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করেন। তাঁদের গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান মোস্তফা।

এরপর বিএসএফ সদস্যরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঢুকে ঘুমন্ত লোকজনের ওপর গুলি চালান। একপর্যায়ে আর পি সিং নামের এক বিএসএফ সদস্য ময়নাকুড়ি গ্রামের শহিদুল ইসলামের বাড়িতে ঢুকে তাঁর ঘুমন্ত স্ত্রী মজিদা বেগমের (২৫) শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। মজিদা জেগে উঠে চৌকির নিচে লুকালে বিএসএফ সদস্য তাঁকে সেখানেই গুলি করে হত্যা করেন। এরপর চৌকির ওপর ঘুমিয়ে থাকা মজিদার এক বছরের ছেলে মামুনকেও বিএসএফ সদস্য গুলি করে মারেন। মজিদার স্বামী শহিদুল বাধা দিতে এলে ওই সদস্য তাঁর হাতে ও নাভির নিচে গুলি করেন।

অতর্কিত গুলির শব্দে লোকজন চিৎকার-চেঁচামেচি করলে বিএসএফ সদস্য আর পি সিং সরে পড়ার চেষ্টা করেন। যাওয়ার সময় রাস্তায় হামিদুল ও হানিফ নামের দুই ভাইকে গুলি করতে উদ্যত হন। দুই ভাই মিলে তাঁকে আটকে ফেলেন এবং পরে গ্রামবাসী পিটুনি দিয়ে আর পি সিংকে বিডিআরের কাছে সোপর্দ করেন।

শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, নিহত মোস্তফার ছেলে শাকিল হোসেন, গুলিবিদ্ধ শহিদুলের ভাই সুজাত আলীসহ অনেকে প্রথম আলোকে জানান, রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিএসএফ গ্রামে ঢুকে এই তান্ডব চালায়। তাঁরা অভিযোগ করেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিডিআর ক্যাম্পে একাধিকবার খবর দেওয়ার পরও তারা যথাসময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেনি। তারা সময়মতো এলে হতাহতের ঘটনা ঘটত না।

বেঁচে যাওয়া জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএসএফ গ্রামে ঢুকে প্রথমে আমাকে গুলি করে। আমি মোস্তফার বাড়ির পাশের পুকুরপাড়ে ছিলাম। গুলি করার আগেই আমি পুকুরে ঝাঁপ দিই এবং কিছুক্ষণ ডুব দিয়ে থাকি। পরে শুনি, ওই গুলি মোস্তফার গায়ে লেগেছে।’ মোস্তফার ছেলে শাকিল হোসেন (২০) বলেন, বিএসএফের গুলিতে বাবা ঘটনাস্থলেই মারা যান।

গুলিতে আরেক আহত আব্দুল করিম (৫৫) বলেন, ‘রাতে খাওয়ার পর ঘুমাতে যাই। এমন সময় বিএসএফ ঘরে ঢুকে গুলি করে। আমারসহ অনেকের বাড়ির টিন ফুটো হয়ে গেছে।’ শহিদুলের ভাই সুজাত আলী বলেন, মজিদা ও তাঁর বাচ্চাকে বিএসএফ কয়েক রাউন্ড গুলি করে।
বিএসএফের অতর্কিত আক্রমণে ময়নাকুড়ি ও কুমারটোল গ্রামের আতঙ্কিত লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে গরু-বাছুর ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড় মহাসড়ক-সংলগ্ন কালান্দীগঞ্জ হাইস্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয়। বিকেলে পতাকা বৈঠকের পর তারা বাড়িঘরে ফেরে।

বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় মাঝিপাড়া সীমান্তে ৪৩৫ নম্বর মেইন পিলারের কাছে ময়নাকুড়ি গ্রামে বিডিআর-বিএসএফের সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে গতকাল দুপুরে পতাকা বৈঠক বসে। বৈঠকে বিডিআরের পক্ষে রংপুর সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল আফতাবুল ইসলাম এবং বিএসএফের পক্ষে কিষাণগঞ্জ সেক্টরের ডিআইজি ড. আর চন্দ্রমোহন নেতৃত্ব দেন।

বৈঠকে ড. আর চন্দ্রমোহন বিএসএফের গুলিতে তিন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন এবং যথাযথ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন। ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। আটক বিএসএফ সদস্যকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে বিডিআর একমত হয়েছে। । নিহত ও আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় ডিআইজি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে। তবে কী কারণে বিএসএফ এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা তিনি বলতে পারেননি।


এতই নতজানু আমাদের আইন আর পররাষ্ট্রনীতি...গুলি করে খুন করার পরও আমাদের ধৃত ওই পশুকে ফেরত দিতে হবে????

এখন তারুণ্যের সময়: মুহম্মদ জাফর ইকবাল

· 0 মন্তব্য(গুলি)

ক্যাথলিক চার্চ ১৯৯২ সালে গ্যালেলিওকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা করেছে। গ্যালেলিওর অপরাধ প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগে তিনি বলেছিলেন পৃথিবী সুর্যের চারপাশে ঘোরে। এমনি এমনি বলেননি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন। কিন্তু ধর্মান্ধ মানুষেরা তাঁর কথা শুনতে রাজি হয়নি, তাঁকে বাকি জীবন ঘরের ভেতরে বন্দী করে রেখেই ক্ষান্ত হয়নি, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহটিকেও ঠিকভাবে সমাহিত করতে দেয়নি। কাজটি যে ভুল হয়েছে সেটা বুঝতে তাদের ৩৬০ বছর লেগেছে, প্রায় একই সময় একই অপরাধে ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, তাঁকে এখনো ক্ষমা করা হয়নি।

পৃথিবীতে যুগে যুগে এই ধর্মান্ধ মানুষেরা পৃথিবীটাকে পেছনে টেনে রাখার চেষ্টা করেছে, ইতিহাসে অসংখ্য উদাহরণ আছে যেখানে দেখা যায় ধর্মের নামে এই ধর্মান্ধ মানুষগুলো কোনো অপরাধ করতে পিছপা হয়নি। তারা শেষ হয়ে যায়নি এখনো আছে, ১৯৭১ সালে আমরা এই দেশে সেটা দেখেছি। বাংলাদেশ হলে এই দেশে ইসলাম ধর্ম থাকবে না সে কথা বলে এই দেশে কত লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল মনে আছে? ভারতবর্ষে শিবসেনা, আফগানিস্তানে তালেবান, যুক্তরাষ্ট্রে ক্লু ক্লাক্স ক্ল্যান, ইউরোপে নিউ নাৎসি−শুধু তাদের ধর্মটা ভিন্ন কিন্তু উদ্দেশ্য কাজকর্ম সবকিছু এক, ধর্মের কথা বলে, সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে পৃথিবীটাকে পেছনে টেনে রাখা। (আমাদের দেশে এই ধর্মান্ধ মানুষগুলো তাদের কাজকর্মের জন্য মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে। মজার কথা হলো, মুখে ইসলামের কথা বললেও এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর নেতারা কিন্তু নিজেদের ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পড়ান না−তাদের আধুনিক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান!)

ধর্মান্ধ এই শক্তিটা হচ্ছে অশুভ শক্তি, আমাদের দেশে এই অশুভ শক্তিটা কিন্তু কীভাবে কীভাবে জানি নিজেদের উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়িত করে ফেলছে। সবাই নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত সংস্কৃতিমান আধুনিক মানুষ, তাঁর উপদেষ্টারাও প্রধান উপদেষ্টার মতো আধুনিক ও উচ্চশিক্ষিত। যেহেতু এই সরকারের পেছনে সেনাবাহিনী আছে কাজেই তাদের কথাও বলতে হয়। আমাদের সেনাপ্রধানও আধুনিক মানুষ, তাঁর বড় অফিসাররাও আধুনিক। শুধু সেনাবাহিনী নয়, আমাদের পুলিশপ্রধানও প্রগতিশীল ও আধুনিক। যেদিকে তাকাই সেদিকেই প্রগতিশীল মানুষ, উচ্চশিক্ষিত আধুনিক মানুষ, কিন্তু তাদের সবার নেতৃত্বে এই দেশে কাজগুলো কী হচ্ছে? ছোট একটা তালিকা দিই:
কিছুদিন আগে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় গায়িকা মমতাজ কিশোরগঞ্জে একটা গানের কনসার্ট করতে পারেননি। সেখানকার মৌলবাদী সম্প্রদায় আপত্তি করছিল−এটি নতুন কিছু নয়। আমাদের দেশে গানের অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবকিছুতেই তারা আপত্তি করে, কিন্তু তাই বলে এই দেশে গানের অনুষ্ঠান হবে না? সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না? এই রাষ্ট্রের সংবিধানে কি সেটাই লেখা আছে? যারা এই সংবিধান রক্ষায় দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতায় বসে আছেন, তাঁরা লজ্জার মাথা খেয়ে কেন ক্ষমতায় বসে আছেন?

নারী উন্নয়ন নীতির কথা মনে আছে? এটা ঘোষণার পরপরই কী করা হলো? নীতিটাকে বাতিল করে দেওয়ার জন্য সেটাকে কিছু ধর্মীয় মৌলবাদীর হাতে পর্যালোচনার জন্য তুলে দেওয়া হলো। তারা কী করলেন? নারী উন্নয়ন নীতিটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিলেন। এখন এই নীতিটার কী অবস্থা, কেউ কি আমাকে বলতে পারবেন?

এই দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল একজন বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার প্রকাশ্য টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে জামায়াতে ইসলামীর একজন কর্মীর হাতে নির্যাতন, সারা দেশে এটা নিয়ে কত হইচই, কত উত্তেজনা, কিন্তু সেই মানুষটিকে কী আইনের আওতায় আনা হয়েছে? আনা হয়নি। শুধু যে শারীরিক নির্যাতন তা-ই নয়, উত্তরবঙ্গে কিছুদিন আগে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য মেরেই ফেলা হয়েছে, সেটার ব্যাপারে কী করা হয়েছে?

অল্প কিছু মাদ্রাসার ছাত্র এসে এয়ারপোর্টের চত্বরে হইচই করার সঙ্গে সঙ্গে লালন ভাস্কর্যটি অপসারণ করে দেওয়া হলো। সারা দেশে সেটা নিয়ে তুমুল উত্তেজনা, কিন্তু লালন ভাস্কর্যটি আর ফিরে আসেনি। অন্য একটি মজার ব্যাপার কি কেউ লক্ষ করেছেন? আমাদের সেনাপ্রধানের দপ্তর থেকে তড়িঘড়ি করে একটা বিবৃতি দেওয়া হয়েছে যে লালন ভাস্কর্য অপসারণে তাঁর কোনো ভুমিকা নেই, তখন তিনি দেশে ছিলেন না, ইত্যাদি ইত্যাদি। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নয় অথচ দেশের মঙ্গল হতে পারে এ রকম বিষয়ে আমাদের সেনাপ্রধান কিন্তু দেশের পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেন, অথচ এ বিষয়ে তিনি কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলেননি। এত বড় ক্ষমতাশালী একজন সেনাপ্রধান কিন্তু মাদ্রাসাছাত্রদের হুমকির মুখে একটা ভাস্কর্য সরিয়ে নেওয়ার কাজটি ভালো হয়েছে, না মন্দ হয়েছে সেই বিষয়ে একটা স্পষ্ট কথা বলার সাহস তাঁর নেই!

গত দুই বছরে কত পুরোনো মামলার তদন্ত নতুন করে করা শুরু হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের জাহাজ ঘাটে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের মামলার কী হলো? এই মামলা পুনর্জীবিত করা হলে সেই সময়ের শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর নামটা উঠে আসবে, সেটাই কি কারণ?

আমাদের প্রধান উপদেষ্টা তাঁর অন্য উপদেষ্টাদের নিয়ে যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিটিং করছিলেন, তখন আমরা একদিন সবিস্নয়ে আবিষ্ককার করলাম তিনি জামায়াতে ইসলামীর নেতা পুলিশের ফেরারি আসামি মুজাহিদের সঙ্গে মিটিং করছেন। একজন ফেরারি আসামির সঙ্গে দেশের সরকারপ্রধান প্রকাশ্যে মিটিং করতে পারে না, সেটা কি তিনি জানেন না? তাঁকে নিষেধ করার সাহস কি তাঁর ছিল না? তিনি নিজেকে যত খুশি অপমান করতে পারেন, কিন্তু রাষ্ট্রের সরকারপ্রধানের চেয়ারটিকে অপমান করার অধিকার কি এই দেশ তাঁকে দিয়েছে?

আমি এই তালিকাটিকে আরও অনেক দীর্ঘ করতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা বলতে পারি, মন্ত্রণালয়ের কথা বলতে পারি, দেশের আমলাদের কথা বলতে পারি, কিন্তু আর বলতে ইচ্ছা করে না। হতে পারে এই দেশটি একটি দুঃখী দেশ, কিন্তু এই দুঃখী দেশটির জন্যই আমাদের বুকের ভেতর গভীর মমতা। সেই দেশটিতে এ রকম একটার পর একটা ঘটনা ঘটে যাবে সেগুলো হা-বিতং করে পত্রপত্রিকায় লিখতে কেন জানি ইচ্ছা করে না, নিজের ভেতরেই কোথায় যেন একধরনের অপমানবোধ হয়।

তার পরও এ কথাগুলো একবার হলেও বলা দরকার। যে মানুষগুলো দেশ চালান, যে সেনাবাহিনী তাদের পেছনে রয়েছে, যে পুলিশ বাহিনী তাদের সাহায্য করছে, যে আমলারা দেশ শাসন করছে তাদের চেহারা, কথাবার্তা, চার-আচরণ−সবকিছু প্রগতিশীল আধুনিক। কিন্তু রহস্যের ব্যাপার হচ্ছে প্রগতিশীল আধুনিক মানুষগুলো দেশ চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার পরও কিন্তু ধর্মান্ধ মানুষগুলো তাদের উদ্দেশ্যগুলো একটার পর একটা অর্জন করছে। প্রতিবারই তারা যেটা চাইছে সেটা অর্জন করে ফেলছে আর আমরা শুধু তার প্রতিবাদ করছি। প্রতিবাদ করে আমরা কিন্তু এখন পর্যন্ত একটা কিছু অর্জন করতে পারিনি, একটা কিছু ফিরিয়ে আনতে পারিনি। মনে হয় একটা অদৃশ্য শক্তি আমাদের ভবিষ্যৎ ভাগ করে দিয়েছে, ধর্মান্ধ শক্তি যেটা চাইবে সেটা তাদের করে ফেলতে দেওয়া হবে। আর আমাদের কপালে রয়েছে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা, প্রতিবাদ করা, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করা, মানববন্ধন করা। যাঁরা দেশ চালাচ্ছেন, তাঁরা অপেক্ষা করে থাকেন কখন আমরা প্রতিবাদ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাব, কারণ আমি সরকারের একটা মানুষকেও শত প্রতিবাদের পরেও এই বিষয়ে একটিবার মুখ ফুটে একটা কথা বলতে দেখিনি।

আমাদের সবার জন্য অনেক সহজ হতো যদি যাঁরা দেশ চালাবেন তাঁদের চেহারা, বেশভুষা, পোশাক, কথাবার্তা, আচার-আচরণ মোল্লা ওমর, নিজামী, মোজাহিদ, বাংলা ভাই বা আমিনীদের হতো। তাঁরা যদি সারাক্ষণ ধর্ম ব্যবসায়ীদের মতো ‘ইসলাম গেল, ইসলাম গেল’ বলে আহাজারি করতেন তাহলেও আমরা বুঝতে পারতাম। কিন্তু আধুনিক চেহারার প্রগতিশীল মানুষ কাজ করে যাচ্ছেন মধ্যযুগের ধর্মান্ধ মানুষের জন্যা−এর চেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার আর কিছু হতে পারে না।

২.
এয়ারপোর্টের সামনের ভাস্কর্যটি নিয়ে যে ব্যাপারটি ঘটেছে সেটা নিয়ে প্রায় সবদিক দিয়ে আলোচনা হয়েছে−নতুন করে বলার আর বিশেষ কিছু নেই। যাদের লক্ষ্য করে এই আলোচনা তাদের কানে তুলো ঠেসে দেওয়া হয়েছে, কালো কাপড় দিয়ে তাদের চোখ বেঁধে রাখা হয়েছে; কাজেই সেই আলোচনা বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই। ধর্মান্ধ গোষ্ঠী যে কারণ দেখিয়ে ভাস্কর্যকে ইসলামবিরোধী হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করছে, সেই একই কারণে মানুষ (কিংবা পশু-পাখির) ছবিও ইসলামবিরোধী হওয়ার কথা। আমরা কিন্তু প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকায় সেই ধর্মান্ধ মানুষগুলোর ছবিই ছাপা হতে দেখছি, তাঁরা ছবি তুলে পাসপোর্ট করছেন, ভোটার আইডি করছেন, অনেক সময় গাঁটের পয়সা খরচ করে নিজের ছবিসহ বিশাল পোস্টার তৈরি করেছেন। তখন কিন্তু তাঁরা একটিবারও সেটা ইসলামবিরোধী বলে আপত্তি করেননি। মানুষের ছবি কিংবা ভাস্কর্য সুস্হির, নড়েচড়ে না। টেলিভিশনে সেই মানুষের ছবি বা অবয়ব শুধু যে নড়েচড়ে তা নয়, কথাও বলে। যদি অপরাধ হয় তাহলে টেলিভিশনের ছবি তার থেকে এক শ গুণ বড় অপরাধ হওয়ার কথা, কিন্তু কোথায়? আমরা তো কখনো কোনো ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে টেলিভিশন বন্ধ করে দিতে শুনলাম না! বরং উল্টোটা দেখেছি যে আলাদাভাবে ইসলামি টেলিভিশন চালু হয়েছে। সব প্রাইভেট চ্যানেলে ইসলামি মানুষেরা ইসলামের কথাবার্তা বলেন−সেটা কী তাদের যুক্তিতে ইসলামবিরোধী কাজ নয়?

ভাস্কর্য ধ্বংস করার সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছিল আফগানিস্তানে ২০০১ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে। ১৭৫ ফুট উঁচু প্রাচীন বামিয়ান বুদ্ধমূর্তিগুলো আফগানিস্তানের তালেবানরা ক্ষেপণাস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্কোরক দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তখন পৃথিবীর মুসলিম দেশের সবচেয়ে বড় সংগঠন ওআইসির (অর্গানাইজেশন অব দি ইসলামিক কনফারেন্স) ৫৪ সদস্য দেশ অত্যন্ত তীব্র ভাষায় সেটা প্রতিবাদ করেছিল। শুধু তা-ই নয়, সৌদি আরব ও ইউনাইটেড আরব আমিরাত এই বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস করার প্রক্রিয়াকে বলেছিল বর্বরতা।

আফগানিস্তানে ভাস্কর্য ধ্বংস করার কাজটি করেছিল তালেবানরা, আমাদের দেশে সেটি করেছে সরকার। এই দুঃখ, এই ক্ষোভ এবং এই ক্রোধ আমরা কোথায় রাখি?

৩.
আমি একজনকে জানি, যার ধারণা ভালো করে খেলেই সব সমস্যা মিটে যায়−আমার অবস্থা অনেকটা সে রকম, আমি মনে করি ভালো করে লেখাপড়া করলেই সব সমস্যা মিটে যায়। এই যে আমাদের দেশের হাজার রকম সমস্যা−ধর্মান্ধতা থেকে শুরু করে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন, পরিবেশ দুষণ থেকে শুরু করে বাচ্চাদের দুধে মেলামিন−আমি মনে করি সবকিছুই শিক্ষা দিয়ে সমাধান করে ফেলা সম্ভব। আমাদের দেশের শিক্ষায় হাজারো রকম সমস্যা, ছাত্রছাত্রীদের মুখস্থ করতে হয়, সৃজনশীলতা দেখালেই বিপদ, প্রাইভেট না পড়ালে ভালো মার্কস পাওয়া যায় না ইত্যাদি। তার মাঝে সরকার পাকা ষড়যন্ত্রীদের মতো তক্কে তক্কে থাকে প্রজেক্টের হাজার কোটি টাকা নষ্ট করে নানা রকম ফন্দিফিকির পাস করিয়ে ছেলেমেয়েদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়−চোখ-কান খোলা না রাখলে সমূহ বিপদ।

কিন্তু সবকিছুর পরেও মনে হয় আমরা বুঝি সত্যিকার শিক্ষাটা দিতে পারছি না। এই বিষয়টি আমার মনে হয় সবচেয়ে সুন্দর করে বুঝিয়েছেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (এই মানুষটির সময় মতো জন্ন না হলে আমাদের যে কী হতো!); তাঁর ভাষায় সংস্কৃতি বা কালচার হচ্ছে একটা পাত্রের মতো। যার ভেতরে এই পাত্রটা আছে তার ভেতরে শিক্ষাটাকে ধারণ করানো যায়। যার ভেতরে সংস্কৃতির পাত্রটা নেই সে যতই শিক্ষা গ্রহণ করুক সেটা জমা হয়ে থাকতে পারে না, সেটা এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আমার মনে হয় এ রকম সত্যি কথা খুব কম বলা হয়েছে, আমাদের চারপাশে এর অনেক উদাহরণ। অনেক বড় চোখধাঁধানো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে যেখানে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নেই, তাই সেখান থেকে মেধাবী চৌকস শিক্ষার্থী পাস করে বের হয়ে বড়জোর একজন স্বার্থপর মানুষ হয়, তাদের নীতি থাকে না, আদর্শ থাকে না, দেশের জন্য ভালোবাসা, দেশের মানুষের জন্য মমতা থাকে না। পরিণত বয়সে যখন নিজের ভেতরে শুন্যতা অনুভব করে কোথায় আশ্রয় নেবে বুঝতে পারে না, তখন অনেক সময় তারা ধর্মান্ধতার মধ্যে নিজের ঠিকানা খুঁজে পায়।

এই বিষয়টি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী খুব ভালো করে জানে। শিক্ষা তাদের কাছে অত্যন্ত সংকীর্ণ একটা বিষয়। সংস্কৃতি তাদের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা, সে জন্য তারা সবার আগে এটাকে ঠেকানোর চেষ্টা করে। আমাদের দেশে একসময় একটা সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা হতো, গহিন পাড়াগাঁয়ে বাউল গান, জারিগান, যাত্রাপালা হতো। একটা গ্রামে এক-দুজন শিক্ষিত মানুষ থাকলেই তাঁরা ছুটিছাটাতে ‘ভ্যারাইটি শো’ করতেন, নাটক করতেন। এখন যতই দিন যাচ্ছে বিষয়গুলো ততই উঠে যাচ্ছে। ধর্মান্ধ মানুষ ধর্মের দোহাই দিয়ে সেগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করছে। সরকার ধর্মান্ধ মানুষের পক্ষে, তারা মুখ ফুটে চাওয়ার আগেই বাধা-নিষেধ চাপিয়ে দিচ্ছে। (এই লেখাটি লেখার সময়ে আমি একটা টেলিফোন পেয়েছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা একটা চলচ্চিত্র তৈরি করেছে, সেটার প্রচার বন্ধ করার জন্য পুলিশ বাহিনী থেকে চিঠি ইস্যু করা হয়ে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে।) ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি আগ্রহ নিয়ে যে কাজটি করে সেটি হচ্ছে, মেয়েদের ঘরের ভেতর বন্দী করে ফেলা। যদি একান্তই ঘরের মধ্যে বন্দী করতে না পারে অন্তত বোরকার মধ্যে বন্দী করে ফেলে। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি তখন আমাদের ক্লাসের প্রায় অর্ধেকই ছিল মেয়ে, তাদের একজনও কিন্তু বোরকা পরে আসত না। তাদের মধ্যে কেউ ধর্ম প্রাণ ছিল না−সেটা সত্যি নয়। যারা ছিল তারা শাড়ি পরত, মাথায় কাপড় দিত এবং আমরা তাদের মূল্যবোধকে সম্মান করতাম। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিবেচনা করলে আজ থেকে ৪০ বছর আগে আমার সহপাঠিনীরা কম ধর্মপ্রাণ ছিল−সেটা আমি একবারও বলব না।

কাজেই আমাদের সময় হয়েছে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে একটা পাত্র হিসেবে বিবেচনা করার, যেন আমরা আমাদের পুরো শিক্ষাটাকে সেখানে রাখতে পারি। ব্যাপারটি নিয়ে আগে কেউ সে রকম মাথা না ঘামালেও আজকাল অনেকেই চিন্তা করছেন, এর জন্যে কাজ শুরু হয়েছে। অনেক স্কুল তৈরি হয়েছে, যেখানে লেখাপড়ার পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়; নীতিহীন স্বার্থপর প্রতিযোগীর জন্ন না দিয়ে সত্যিকারের মানুষের জন্ন দেওয়া হয়।

৪.
কিছুদিন আগে আমার কাছে হঠাৎ একটা এসএমএস এসেছে। সম্ভবত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র লিখেছে, ‘স্যার, আপনারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে চিন্তা করবেন না, আমরা তাদের বিচার করে এই মেগা সিরিয়াল শেষ করব।’

এই এসএমএসটিতে একধরনের সারল্য আছে, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আছে, হয়তো খানিকটা অহংকারও আছে। কিন্তু এই কথাটি একশ ভাগ সত্যি। আমি দেখেছি আমাদের নতুন প্রজন্ন অনেক সময়েই জানে না তাদের ভেতরে কী অমিত শক্তি লুকিয়ে আছে। আমাদের তরুণেরা যদি না থাকত তাহলে বায়ান্নার ভাষা আন্দোলন হতো না, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধও হতো না। আমার বিশ্বাস, আমাদের তরুণেরা যদি দায়িত্ব নেয় তাহলে দেশের এই দুঃসময়ে আবার তারা একটা বড় ভুমিকা পালন করতে পারবে।

আমাদের খুব দুর্ভাগ্য, সারা পৃথিবীতেই এখন একটা দুঃসময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্নকে এখন বোঝানো হচ্ছে তুমি সুদর্শন হও, তুমি সুন্দরী হও। তুমি সুন্দর কাপড় পরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারো, ফুর্তি করো, টাকা খরচ করো, জীবন উপভোগ করো−কারণ, এটাই হচ্ছে জীবন। কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে জানি, এটা সত্যিকারের জীবন নয়। তারুণ্যের যে বিশাল একটা শক্তি আছে তার একটা অংশ তাদের দেশকে দিতে হবে, সমাজকে দিতে হবে। ধর্মান্ধতার যে আগ্রাসন শুরু হয়েছে, সেটাকে থামানোর প্রথম দায়িত্ব ছিল সরকারের। আমরা আগে দেখেছি কোনো সরকারই সেই আগ্রাসন ঠেকাতে প্রস্তুত নয়, তারা সব সময়েই নতজানু। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আমরা এই মুহুর্তে দেখছি। ওদিকে আওয়ামী লীগ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে চুক্তি পর্যন্ত করে ফেলেছিল, জোট সরকার তো সরাসরি ধর্মান্ধতায় পৃষ্ঠপোষকই ছিল। ভবিষ্যতে কোন সরকার আসবে, আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না; কিন্তু যে সরকারই আসুক, আমরা অনুমান করতে পারি ভোটব্যাংক রক্ষা করার জন্য তারা সেটা ঠেকাতে এগিয়ে আসবে না। তাদের ঠেকাতে হবে এই তরুণ সমাজকে।

তাদের প্রথমেই বুঝতে হবে যে তাদের খানিকটা দায়িত্ব আছে। বিলবোর্ড, রেডিও, টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন, খবরের কাগজে সুদর্শন কিংবা সুন্দরী সেজে জীবনকে ভোগ করার যে ডাক দেওয়া হচ্ছে সেটি শুনলে চলবে না। তাদের জীবনের আরও অনেক গভীরে যেতে হবে। তাদের দেশের ইতিহাস জানতে হবে, কত আত্মত্যাগ করে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে সেটা অনুভব করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে হবে, মুক্তিযোদ্ধাদের কথা জানতে হবে, একই সঙ্গে কারা এই দেশের সঙ্গে বেঈমানি করেছে সেটাও জানতে হবে। নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য।

একটা সময় ছিল যখন প্রতিটি গ্রামে শীতকালে নাটক হতো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো; প্রতিটি স্কুলে বিচিত্রানুষ্ঠান হতো, ছেলেমেয়েরা আগ্রহ নিয়ে সেসব অনুষ্ঠানের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করত। আবার আমাদের সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে হবে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যখন ছুটিছাটায় নিজ এলাকায় যাবে, তাদের সেই এলাকার দায়িত্ব নিতে হবে। নিজের স্কুলে গিয়ে নিজের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে আবার তাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে গান গেয়ে রাতারাতি টেলিভিশনের স্টার হতে চাইলে হবে না, গান গাইতে হবে সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, উজ্জীবিত করার জন্য।

যুদ্ধাপরাধীরা যখন এই দেশের শেকড় ধরে টান দিয়েছে তখন আমাদের সেক্টর কমান্ডার থেকে শুরু করে অনেক মুক্তিযোদ্ধা, অনেক শহীদ পরিবার, অনেক দেশ প্রেমিক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। তরুণ প্রজন্নকে তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে, নিজেদের নেতৃত্ব দিতে হবে। আমি অত্যন্ত বেদনাহত হই, যখন দেখি খেলাঘরের মতো শিশু-কিশোরদের সংগঠন দুই ভাগে বিভক্ত কিংবা প্রজন্ন ’৭১-এর মতো তারুণ্যের সংগঠন দুই ভাগে বিভক্ত। দেশের অনেক বড় প্রয়োজনে তাদের একত্র হতে হবে, একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য পুরোপুরি নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার যে কী আনন্দ, তাদের তা একটিবারের জন্য হলেও অনুভব করার সুযোগ করে দিতে হবে।
আইনস্টাইন বলেছিলেন, প্রতিটি বিপর্যয়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকে সম্ভাবনার একটা সুযোগ। আমরা একটা বিপর্যয়ের মধ্যে আছি। আমাদের তরুণ সম্প্রদায় সেখান থেকে সম্ভাবনার সুযোগ বের করে আমারে উপহার দেবে−আমি সেই আশায় বুক বেঁধে আছি।

চেন্জ উই বিলিভ: আমাদের দেশের রাজনীতিতেও আসছে ভিডিও কনফারেন্স

২৩ নভে, ২০০৮ · 0 মন্তব্য(গুলি)

ওবামার ডেমোক্রেটিক কনভেনশনে বেডরুম থেকে ভিডিও কনফারেন্স দেখে যারা ভাবতেন..আমাদের দেশে কবে হবে?? সুখবর হলো সেটা আজই হবার কথা ছিল।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীদের সমর্থকদের সঙ্গে শনিবার সন্ধ্যার পর শেখ হাসিনার ভিডিও কনফারেন্স করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

বিকেলে সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের তথ্য সচিব বলেছিলেন, "ভিডিও কনফারেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সুধা সদনের ফটকের সামনে একটি ৪২ ইঞ্চি এলসিডি মনিটর ও ওয়েবক্যাম বসানো হয়েছে। শেখ হাসিনা বাড়ির ভেতর থেকে এবং কর্মী-সমর্থকরা বাইরে থেকে এতে অংশ নেবেন। মনিটরের একটি অংশে শেখ হাসিনাকে এবং অন্য অংশে কর্মীদের দেখা যাবে। সন্ধ্যার পর কোনো এক সময় এই কনফারেন্স হবে। নিরাপত্তার খাতিরে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলা সভানেত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্যই ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি সবার সঙ্গেই কথা বলতে পারবেন।"

বেলা সাড়ে ৩টার দিকে এক দফা পরীক্ষামূলক কনফারেন্সও করেন শেখ হাসিনা। সে সময় তিনি বাড়ির বাইরে থাকা দলীয় কর্মী ও নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

কিন্তু মহাজোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের কারণে ভিডিও কনফারেন্সটি হয়নি। পরে সেটি আর আয়োজন করা হবে কিনা তা জানা যায়নি।

আমরা আশা করছি কালকেই বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এই ঐতিহাসিক ঘটনা চাক্ষুস করবো।

বিডিনিউজ থেকে সংকলিত

প্রতিবাদের খরচ দৈনিক মাত্র ১ লক্ষ টাকা

· 0 মন্তব্য(গুলি)

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিক্ষোভ প্রতিদিনই বাড়ছে। নতুন নতুন বিক্ষোভকারীর সমাগম ঘটছে সুধা সদনের সামনে। একেকজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর পক্ষে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ বিক্ষোভকারীর আগমন ঘটছে। জনপ্রতি গড়ে ২০০ টাকা হারে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে পত্রিকায় খবর এসেছে।

এখানে দুই ধরনের বিক্ষোভকারী আছে: ক্যাজুয়াল এবং স্হায়ী।

১. ক্যাজুয়াল: এরা ঘণ্টাপ্রতি অর্থ গ্রহণ করে বিভিন্ন মনোনয়নবঞ্চিতের পক্ষে বিক্ষোভ করে থাকেন। বিক্ষোভকারীদের একটি বড় অংশ এই ক্যাটাগরীর এবং এরা কেউই সংশ্লিষ্ট এলাকার নয়।

২. স্থায়ী: এরা নির্দিষ্ট ভাতার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে এসেছে।

এসব বিক্ষোভকারীর যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগের কারণে সুধা সদনের চারপাশের প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। মিছিল-স্লোগান ও ব্যাপক জনসমাগমের কারণে এলাকাবাসীকে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের জন্য ওই এলাকায় বৈকালিক ভ্রমণকারীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

তবে এ এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো চলছে। চা, সিগারেট, বিস্কিট বিক্রেতাদের জমজমাট ব্যবসা চলছে।

যায়যায়দিন থেকে সংকলিত

যৌতুক চাওয়ার অভিযোগে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করলেন স্বামী

· 0 মন্তব্য(গুলি)


টাইটেল ভূল পড়েন নি। আজকের দৈনিক পত্রিকার খবর

১৩ বছর দাম্পত্যজীবন অতিবাহিত করার পর গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া নিবাসী কামরুল হোসেন তার স্ত্রী ডালিয়া পারভীনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে (ডালিয়ার ভাই মেহেদী হাসান, মা রিনা বেগম ও পিতা কোমরে আলম শেখ) যৌতুক দাবির অভিযোগে মামলা করেছেন। গত বুধবার মামলাটি দায়ের করা হয়েছে ঢাকা সিএমএম আদালতে।

ঢাকা মহানগর হাকিম ড. মো. আবদুল মজিদ বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের প্রতি সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে বাদীর আইনজীবী মশিউর রহমান মুরাদ জানান, এ ধরণের ঘটনা ব্যতিক্রম হলেও বাস্তব। অনেক স্বামীই স্ত্রীর হাতে নির্যাতিত হয় কিন্তু বলতে পারে না

অভিযোগে বলা হয়, দাম্পত্যজীবনে তারা দুই সন্তানের জনক-জননী। স্ত্রী বিভিন্ন সময় মা-বাবা ও ভাইয়ের পরামর্শে সংসার না করার ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা নিয়েছে। সর্বশেষ তার ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য দাবিকৃত ৩ লাখ টাকা না দেয়ায় নগদ ৪ লাখ টাকা ও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার নিয়ে স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যায়। গত ৩০ অক্টোবর স্বামী তাকে আনতে গেলে তিনি জানান, তার নামে ৫ লাখ টাকার ডিপোজিট করে দিতে হবে।

ডিসক্লেইমার: যারা এখনও নানান শংকায় বিয়ে করেন নি, এই লেখাটিতে তাদের জন্য কোন বার্তা নেই।

দেবদাস নেশা ছেড়েছে, আপনিও ছাড়ুন

· 0 মন্তব্য(গুলি)


এবং বিবাহিত হলে নিজের ঘরের ব্যাপারে সাবধান :)

রাষ্ট্রদূতঃ যোগ্যতা, তৈলমর্দন না পিঠ বাচানোর জন্য?

· 0 মন্তব্য(গুলি)

প্রধান উপদেষ্টার তথ্য সচিব সৈয়দ ফাহিম মুনয়েমকে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত নিয়োগের জন্য তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে, বিডিনিউজ কিছুক্ষণ আগে দিল এ খবর। বৃহস্পতিবার সংস্থাপন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে।

তার কি যোগ্যতা আছে রাষ্ট্রপতি হবার?

এর আগে গেল জেনাঃ মাসুদ, ইয়াসমিন মুর্শেদ। এরশাদ-জিয়ার আমলেও অনেক বির্তকিত লোকদের এভাবে রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হয়েছিল।

শেখ হাসিনাঃ আপনার অপেক্ষাতেই গোটা জাতি

· 0 মন্তব্য(গুলি)

চিকিৎসা শেষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশ ফিরছেন, ঠিক এর আগেই পীর হাবিব তাকে উদ্দেশ করে লিখলেন। পীর হাবিব তার সর্বশেষ লেখায় আবারো আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে আক্রমণ করেছেন। দীর্ঘ লেখায় তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে কিছু 'নসিহত'ও করেছেন। এসব একান্তই তার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা। যে কেউ তার নিজস্ব মতামত রাখতেই পারে। কিন্তু একজন পাঠক হিসেবে আমার মধ্যে কিছু প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে। তাই এই লেখার অবতারণা।

পশ্চিমবাংলার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থেকে বিদায় নেয়ার সময় তার কমরেডদের উদ্দেশে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ঐ ভাষণে তিনি বলেছিলেন, 'আপনাদের পৰে-বিপৰে নেতারা কী বলেছে তা নিজ কানে শুনুন। অন্যের কাছ থেকে আপনার সমালোচনা কিংবা প্রশংসা কোনোটাই বিশ্বাস করবেন না।' পীর তার লেখায় বলেছেন, তিনি শুনেছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তার উপর ৰুব্ধ। এটা শুনেছেন কাদের কাছে যারা আড়ালে তাকে বাহ্বা দেয়। এর মানে ঐ লোকগুলো মন্দ লোক। তাদের কথাতেই এক দীর্ঘ লেখা লিখে ফেললেন পীর?

ওয়ান ইলেভেনের পর শুধু পীর হাবিব কেন, অনেক রথি-মহারথিরা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিরুদ্ধে লিখেছেন। স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল একটি মহল '৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই গণমাধ্যমে শেখ হাসিনাকে আক্রমণ করে আসছে। মিথ্যা, অসত্য রিপোর্ট, প্রতিবেদন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যত হয়েছে, পৃথিবীর কোনো দেশে, কোনো জাতীয় নেতার বিরুদ্ধে তা হয়নি। '৯১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের পর দেশের অনেক বরেণ্য বুদ্ধিজীবী শেখ হাসিনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে এতটুকু কার্পণ্য করেনি। '৯৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর তারা অনেকেই নেত্রীর কাছে গেছেন, তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। শেখ হাসিনা তাদের সামান্য ভর্ৎসনা করেছেন এমন রেকর্ড নেই। আমার বিশ্বাস, শিগগিরই পীর হাবিবও তার ভুল বুঝতে পারবেন। কারণ, আমি তার লেখার পরিবর্তন লৰ্য করছি। বহু লোক বঙ্গবন্ধু কন্যাকে নানাভাবে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আবার ফিরে এসেছে। শেখ হাসিনা তাদের প্রতি কখনো ৰোভ বা প্রতিহিংসা দেখাননি। বঙ্গবন্ধুর রক্তে ৰোভ, প্রতিহিংসা নেই। তা থাকলে, শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় '৭৫-এর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার প্রচলিত আইনে হতো না। শেখ হাসিনা প্রতিহিংসার রাজনীতি করলে ফারুক রশীদের ক্রসফায়ার হতো। শেখ হাসিনার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বিরল গুণগুলোর একটি বেশি তীব্র, তা হলো ৰমা। আর পীর আপনি কেন, গত ৩৩ বছর একশ্রেণীর গণমাধ্যম দ্বারা শেখ হাসিনা যে পরিমাণ অপসাংবাদিকতার শিকার হয়েছেন তাতে যদি প্রতিক্রিয়া দেখাতেন, তাহলে তিনি রাজনীতি করতে পারতেন না।

পীর হাবিবের লেখার সমস্যা হলো, তিনি সবকিছু খণ্ডিতভাবে দেখেন। যার ফলে যেকোনো জিনিসের একটি অবিকৃত চিত্র ও তথ্য তার লেখায় অনুপস্থিত থাকে। মোহিত লাল মজুমদার কেবল রবীন্দ্র সমালোচক ছিলেন না একজন রবীন্দ্র ভক্তও ছিলেন। মোহিত লাল রবি ঠাকুরের প্রশংসা করে যত কথা লিখেছেন, তেমন শক্তিশালীভাবে আর কজন লিখেছেন?

আপনি আবার দুই নেত্রীর ব্যর্থতার কথা বলছেন। ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, 'একজন রাজনৈতিক নেতা সফল না ব্যর্থ সে সিদ্ধান্ত দেবে জনগণ, নাগরিকগণ। একজন নেতাকে যদি জনগণ প্রত্যাখ্যান করে তাহলে তিনি ব্যর্থ আর জনগণ যদি তাকে সমর্থন করে তাহলে তিনি সফল।' আসুন এই তত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে দেখি বঙ্গবন্ধু কন্যা সফল না ব্যর্থ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ '৯১-এর নির্বাচনে সরকার গঠন করতে পারেনি, কিন্তু ভোট পেয়েছিল বিএনপির চেয়ে বেশি। '৯৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগে ৩৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির কথা বলা হলেও বাস্তবে '৯৬-এর চেয়ে তিন শতাংশ বেশি ভোট পায় দলটি (৪০ দশমিক ৮৬ শতাংশ)। তাই জনসমর্থনের মাপকাঠিতে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সফলতম নেতা। প্রতিটি নির্বাচনে তার এবং তার দলের সমর্থন বেড়েছে।

পীর হাবিব তার লেখার দ্বিতীয় অংশে নাম ধরে কিছু ব্যক্তির প্রশংসা করেছেন, নাম ধরে কাউকে সমালোচনা করেছেন। আমি তাদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার ব্যক্তিগত বিতর্কে যাব না। ক্লিনটন যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন তখন, তার কিছু কিছু নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। ল্যারি কিং লাইভে এসে ক্লিনটন, এই সমালোচনার জবাব দিয়েছিলেন এভাবে, 'দেখুন দলটা আমার, আমি তাদের নিয়েই দল গড়েছি যাদের সঙ্গে কাজ করতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমি যখন দল চালাব তখন আমার মতোই লোক বাছাই করতে দিন। আপনারা দিনের শেষে দেখুন দলটা ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা।' তাই দোহাই লাগে, কে ভালো কে খারাপ, কে আপনার পছন্দের, কে আপনার বিপৰের সেই বিতর্ক আনবেন না। আপনার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া, পছন্দ-আনন্দ জাতীয় নেতার উপর চাপানোর চেষ্টা করবেন না। শেখ হাসিনা যার সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন তাকে নিয়েই কাজ করতে দিন। তিনি যেখানে আছেন, তার থেকে আমার আপনার দূরত্ব যোজন যোজন। তাই আপনার ভাবনার সঙ্গে তার ভাবনা না মিললেই তিনি ব্যর্থ একরম অর্থহীন-যুক্তিহীন কথা না বলাই ভালো। দেখতে হবে, আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে দেয়া অঙ্গীকারগুলো পূরণ করছে কিনা, নীতি আদর্শে অটল আছে কিনা। পীর আপনার লেখাতেই আপনি ব্যক্তি বন্দনার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন, আবার আপনিই কয়েকজনকে 'সার্টিফিকেট' দিচ্ছেন, তাদের বন্দনা করছেন। এটা কি স্ববিরোধী হলো না?

আপনি বলছেন তৃণমূলের ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা, আপনিই আবার নাম বলে দিচ্ছেন কাকে কাকে মনোনয়ন দিতে হবে। কী আশ্চর্য কথা! শুধু সাংসদ নয়, মন্ত্রিসভায় কাদের নেয়া উচিত আপনি সে পরামর্শও দিয়েছেন। বা! কী অদ্ভুত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সরকার কে চালাবেন আপনি না শেখ হাসিনা? ম্যানচেস্টার ইউনিয়ন শুধু ইংল্যান্ডে নয়, সারা বিশ্বে ফুটবলের জনপ্রিয় ক্লাব। এই ক্লাবের কোচ স্যার আলেক্স ফাগুন, কবছর আগে তাদের দামি তারকা ডেভিড বেকহ্যামকে বাদ দেন। শুধু ইংল্যান্ড নয়, বিশ্বব্যাপী এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়, বেকহ্যাম ভক্তরা ৰোভে ফেটে পড়ে। ফাগুন বলেন, 'দল ১১ জন গোলরৰক দিয়ে যেমন চালানো যায় না, তেমনি ১১ জন স্টার (তারকা) দিয়েও চালানো যায় না।' পীর হাবিব মন্ত্রিসভাটাও এরকম। আপনি নিশ্চয়ই মানবেন যিনি প্রধানমন্ত্রীর হট সিটে বসেন তাকে অনেক কিছু একসঙ্গে মাথায় নিয়ে কাজ করতে হয়। তাকে কার্যকর এবং উপযোগী একটা টিম বানাতে হয়।

আপনার আমার চেয়ে শেখ হাসিনা অনেক প্রাজ্ঞ, বিচক্ষণ। তার নেতৃত্ব প্রশ্নাতীত। তাই এসব মাইনর ডিটেইলে না গিয়ে আসুন না আমরা প্রত্যাশা করি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি সেকুল্যার বাংলাদেশ। যে দেশে দারিদ্র্য, সন্ত্রাস থাকবে না, দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন বঞ্চিত হবে না দেশের মানুষ। আসুন না আমরা সবাই মিলে, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করে এই বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করি। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় শেষ ভাষণে বলেছিলেন 'ক্ষুধা দারিদ্র্য মুক্ত, সন্ত্রাস দুর্নীতিমুক্ত একটি গর্বিত বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব স্বাধীনতার রজত জয়ন্তীতে।' আসুন না আমরা সবাই মিলে সেই প্রত্যাশিত বাংলাদেশের জন্য কাজ করি। পীর অনেক তো সমালোচনা হলো, একবার বলুন না, শেখ হাসিনা একমাত্র আপনিই পারেন এমন এক স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে। কারণ আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। একবার বলুন না, বঙ্গবন্ধুর রক্ত আপনার ধমনিতে তাই, আজ জাতির এই ক্রান্তিকালে আপনার অপেক্ষাতেই গোটা জাতি।

সৈয়দ বোরহান কবীর
নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ওবামার বিজয়ের আনন্দে IELTS-এ বিশেষ ছাড়!!

· 0 মন্তব্য(গুলি)


ওবামার বিজয়ের আনন্দকে পরিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সাইফুর সাহেব ৫০% ছাড় ঘোষণা করেছেন!!

মাত্র ২ দিনের সুযোগ..হেলায় হারাবেন না

ই-প্রথম আলোঃ অনলাইনে বাংলা পত্রিকার নবতর যাত্রা

· 0 মন্তব্য(গুলি)

প্রথম আলো গতকাল থেকে ই-প্রথম আলো চালু করেছে। আজকে ঢুকে খুবই সুন্দর লাগলো। আমার যারা অনলাইনে দেশের পত্রিকা পড়ি, আসল পত্রিকার চেহার কখনই পাই না, এ অভিযোগ অনেকের। অনেকেই পত্রিকার বিজ্ঞাপন গুলোও মিস করেন। কিছু কিছু পত্রিকা (ইত্তেফাক, আমাদের সময়..) প্রথম ও শেষ পাতার স্ক্যান কপি হোমপেজে দিত (বিজ্ঞাপন ছাড়া)। কিন্তু প্রথম আলোর এই ভার্সণ টি চমৎকার ইন্টারআ্যাকটিভ মনে হল। প্রথম আলোর কর্পোরেট পলিসি নিয়ে আমার ক্ষোভ থাকলেও এই দারুণ উদ্যোগটিকে স্বাগত জানাই। আশা করব অন্য পত্রিকাগুলোও শীঘ্রই এ ধারা অনুসরণের চেষ্টা করবে।

একটি নোয়াখালীয় প্রেমের কবিতা

· 0 মন্তব্য(গুলি)




পুরো কবিতার ফাইলটি বড় বলে এখানে দিতে পারলাম না...বাকীটা পড়ুন:

Click This Link

দ্রুতগতির ফ্রি পিডিএফ রিডার

· 0 মন্তব্য(গুলি)

পিডিএফ(PDF) একটি জনপ্রিয় এবং প্রয়োজনীয় ফাইল ফরমেট । পিডিএফ ফাইল ওপেন করার জন্য আমরা সাধারনত Adobe Acrobat Reader ব্যবহার করে থাকি । Acrobat Reader পিসিতে অনেক জায়গা নেয় এবং পিডিএফ ফাইল খুলতে অনেক সময় লাগে ।

এ সমস্যা এড়াতে http://www.foxitsoftware.com ওয়েব সাইট থেকে Foxit Reader সফটওয়্যারটি ফ্রি ডাউনলোড করে নিন । এটি আকারে খুব ছোট এবং ইন্সটল হতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে । পিডিএফ ফাইল খোলা যায় খুব দ্রুত। তাই দেরি না করে এখনই ডাউনলোড করে নিন এই ফ্রি সফটওয়্যারটি।


বিজ্ঞানী সাইট থেকে

ভিজিট করুন ব্লক করা সাইট

· 0 মন্তব্য(গুলি)

ইদানিং প্রায় ব্লগাররাই অনুযোগ করছে তাদের অফিসে সামুব্লগ ব্লক করা। অন্যান্য অনেক সাইটও আইএসপি বা সরকারী ভাবে নানা জায়গা থেকে ব্লক করে রাখে।

এরকম পরিস্হিতিতে সাইটগুলো ব্রাউজ করতে সাধারনত: প্রক্সি পরিবর্তন করা হয়। নানারকম সাইটও আছে এ বিষয়ে।

প্রক্সি পরিবর্তন করে ব্রাউজ করলে নানা রকম সমস্যা হতে পারে। বেশীর ভাগ সময়ই জাভা কাজ করে না।

কিছু জনপ্রিয় সফটওয়্যার আছে এ বিষয়গুলো সমাধানের জন্য।

প্রক্সিশেল হাইড আইপি সে ধরনের একটি সফটওয়্যার।

পাসওর্য়াড: Mechodownload

বিকল্প লিংক

সফটওয়্যার বিষয়ক যে কোন সমস্যার জন্য আসুন সফট-প্লানেট গ্রুপে

ব্লগীয় দায়িত্বহীনতা এবং প‌্যাচালী

· 0 মন্তব্য(গুলি)

ব্লগ হিসাবে প‌্যাচালীর নানারকম দূর্ণাম আছে...সাইটটি এখনও জমজমাট হয়ে উঠতে পারে নি। জামায়াত সমর্থক, আওয়ামী লিগ সমর্থক এই ধরনের নিকের লোকজনও সেখানে ব্লগিং করতো...কিন্তু পরিবেশটি ভালো ছিল..গালাগালি বিহীন..কিছু কিছু মানসম্পন্ন ব্লগারও ছিলেন সেখানে।

সাইটটির নানা সমস্যা বিভিন্ন সময়ে ব্লগাররা তুলে ধরেছেন...কর্তপক্ষ (সম্ভবত: একজন) জানিয়েছিলেন পরবর্তী ভার্সণে এইগুলো দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে। কিন্তু কোন সময় দেন নি তিনি। আমি একাধিক বার জানতে চেয়েছিলাম আমরা নতুন ভার্সণ কবে পাব...জানতে পারি নি।।

গতকাল সাইটে ঢুকতে যেয়ে দেখি:

We are upgrading the site completely and that's why we will be unavailable for next couple of months.

Sorry for the interruption.

- Pechali Admin

আমাদের পোষ্টগুলো ব্যাক আপ করার নূন্যতম সুযোগটাও পেলাম না।

ব্লগ একটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম...এর সাথে যারা জড়িত তাদের কাছ থেকে আরো অনেক বেশী দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি।।

সামহোওয়্যারের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য..সাইট আপডেট করা হবে..খুশীর কথা....এক-দুদিন আগে থেকে একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দিলে কি খুব বেশী সমস্যা হয়?? সারাদিন ধরে হাজার খানেক লোক ক্লিক করে করে ক্লান্ত হয়...

এডমিনরা ভেবে দেখবেন আশা করি..

ত্যাগ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প

২৯ অক্টো, ২০০৮ · 0 মন্তব্য(গুলি)

প্রথম পরিচ্ছেদ

ফাল্গুনের প্রথম পূর্ণিমায় আম্রমুকুলের গন্ধ লইয়া নব বসন্তের বাতাস বহিতেছে। পুষ্করিণীতীরের একটি পুরাতন লিচু গাছের ঘন পল্লবের মধ্য হইতে একটি নিদ্রাহীন অশ্রান্ত পাপিয়ার গান মুখুজ্জেদের বাড়ির একটি নিদ্রাহীন শয়নগৃহের মধ্যে গিয়া প্রবেশ করিতেছে। হেমন্ত কিছু চঞ্চলভাবে কখনো তার স্ত্রীর একগুচ্ছ চুল খোঁপা হইতে বিশ্লিষ্ট করিয়া লইয়া আঙুলে জড়াইতেছে, কখনো তাহার বালাতে চুড়িতে সংঘাত করিয়া ঠুং ঠুং শব্দ করিতেছে, কখনো তাহার মাথার ফুলের মালাটা টানিয়া স্বস্থানচ্যুত করিয়া তাহার মুখের উপর আনিয়া ফেলিতেছে। সন্ধ্যাবেলাকার নিস্তব্ধ ফুলের গাছটিকে সচেতন করিয়া তুলিবার জন্য বাতাস যেমন একবার এ পাশ হইতে একবার ও পাশ হইতে একটু-আধটু নাড়াচাড়া করিতে থাকে, হেমন্তের কতকটা সেই ভাব।

কিন্তু কুসুম সম্মুখের চন্দ্রালোকপ্লাবিত অসীম শূন্যের মধ্যে দুই নেত্রকে নিমগ্ন করিয়া দিয়া স্থির হইয়া বসিয়া আছে। স্বামীর চাঞ্চল্য তাহাকে স্পর্শ করিয়া প্রতিহত হইয়া ফিরিয়া যাইতেছে। অবশেষে হেমন্ত কিছু অধীরভাবে কুসুমের দুই হাত নাড়া দিয়া বলিল, "কুসুম, তুমি আছ কোথায়। তোমাকে যেন একটা মস্ত দূরবীন কষিয়া বিস্তর ঠাহর করিয়া বিন্দুমাত্র দেখা যাইবে, এমনি দূরে গিয়া পড়িয়াছ। আমার ইচ্ছা তুমি আজ একটু কাছাকাছি এসো। দেখো দেখি, কেমন চমৎকার রাত্রি।"

কুসুম শূন্য হইতে মুখ ফিরাইয়া লইয়া স্বামীর মুখের দিকে রাখিয়া কহিল, "এই জ্যোৎস্নারাত্রি, এই বসন্তকাল, সমস্ত এই মুহূর্তে মিথ্যা হইয়া ভাঙিয়া যাইতে পারে এমন একটা মন্ত্র আমি জানি।"

হেমন্ত বলিল, "যদি জান তো সেটা উচ্চারণ করিয়া কাজ নাই। বরং এমন যদি কোনো মন্ত্র জানা থাকে যাহাতে সপ্তাহের মধ্যে তিনটে চারটে রবিবার আসে কিংবা রাত্রিটা বিকাল পাঁচটা সাড়ে-পাঁচটা পর্যন্ত টিকিয়া যায় তো তাহা শুনিতে রাজি আছি।" বলিয়া কুসুমকে আর-একটু টানিয়া লইতে চেষ্টা করিল। কুসুম সে আলিঙ্গনপাশে ধরা না দিয়া কহিল, "আমার মৃত্যুকালে তোমাকে যে কথাটা বলিব মনে করিয়াছিলাম, আজ তাহা বলিতে ইচ্ছা করিতেছে। আজ মনে হইতেছে, তুমি আমাকে যত শাস্তি দাও-না কেন, আমি বহন করিতে পারিব।"

শাস্তি সম্বন্ধে জয়দেব হইতে শ্লোক আওড়াইয়া হেমন্ত একটা রসিকতা করিবার উদ্যোগ করিতেছিল। এমন সময়ে শোনা গেল একটা ক্রুদ্ধ চটিজুতার চটাচট্ শব্দ নিকটবতী হইতেছে। হেমন্তের পিতা হরিহর মুখুজ্জের পরিচিত পদশব্দ। হেমন্ত শশব্যস্ত হইয়া উঠিল।

হরিহর দ্বারের নিকটে আসিয়া ক্রুদ্ধ গর্জনে কহিল, "হেমন্ত, বউকে এখনি বাড়ি হইতে দূর করিয়া দাও।"

হেমন্ত স্ত্রীর মুখের দিকে চাহিল; স্ত্রী কিছুই বিস্ময় প্রকাশ করিল না, কেবল দুই হাতের মধ্যে কাতরে মুখ লুকাইয়া আপনার সমস্ত বল এবং ইচ্ছা দিয়া আপনাকে যেন লুপ্ত করিয়া দিতে চেষ্টা করিল। দক্ষিণে বাতাসে পাপিয়ার স্বর ঘরে প্রবেশ করিতে লাগিল, কাহারও কানে গেল না। পৃথিবী এমন অসীম সুন্দর, অথচ এত সহজেই সমস্ত বিকল হইয়া যায়।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

হেমন্ত বাহির হইতে ফিরিয়া আসিয়া স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করিল, "সত্য কি।"

স্ত্রী কহিল, "সত্য।"

"এতদিন বল নাই কেন।"

"অনেকবার বলিতে চেষ্টা করিয়াছি, বলিতে পারি নাই। আমি বড়ো পাপিষ্ঠা।"

"তবে আজ সমস্ত খুলিয়া বলো।"

কুসুম গম্ভীর দৃঢ় স্বরে সমস্ত বলিয়া গেল - যেন অটলচরণে ধীরগতিতে আগুনের মধ্যে দিয়া চলিয়া গেল, কতখানি দগ্ধ হইতেছিল কেহ বুঝিতে পারিল না। সমস্ত শুনিয়া হেমন্ত উঠিয়া গেল।

কুসুম বুঝিল, যে স্বামী চলিয়া গেল সে স্বামীকে আর ফিরিয়া পাইবে না। কিছু আশ্চর্য মনে হইল না; এ ঘটনাও যেন অন্যান্য দৈনিক ঘটনার মতো অত্যন্ত সহজভাবে উপস্থিত হইল, মনের মধ্যে এমন একটা শুষ্ক অসাড়তার সঞ্চার হইয়াছে। কেবল, পৃথিবীকে এবং ভালোবাসাকে আগাগোড়া মিথ্যা এবং শূন্য বলিয়া মনে হইল। এমন-কি, হেমন্তের সমস্ত অতীত ভালোবাসার কথা স্মরণ করিয়া অত্যন্ত নীরস কঠিন নিরানন্দ হাসি একটা খরধার নিষ্ঠুর ছুরির মতো তাহার মনের এক ধার হইতে আর-এক ধার পর্যন্ত একটি দাগ রাখিয়া দিয়া গেল। বোধ করি সে ভাবিল, যে ভালোবাসাকে এতখানি বলিয়া মনে হয়, এত আদর, এত গাঢ়তা - যাহার তিলমাত্র বিচ্ছেদ এমন মর্মান্তিক, যাহার মুহূর্তমাত্র মিলন এমন নিবিড়ানন্দময়, যাহাকে অসীম অনন্ত বলিয়া মনে হয়, জন্মজন্মান্তরেও যাহার অবসান কল্পনা করা যায় না - সেই ভালোবাসা এই! এইটুকুর উপর নির্ভর! সমাজ যেমনি একটু আঘাত করিল অমনি অসীম ভালোবাসা চূর্ণ হইয়া একমুষ্টি ধূলি হইয়া গেল! হেমন্ত কম্পিতস্বরে এই কিছু পূর্বে কানের কাছে বলিতেছিল, "চমৎকার রাত্রি!" সে রাত্রি তো এখনো শেষ হয় নাই ; এখনো সেই পাপিয়া ডাকিতেছে, দক্ষিণে বাতাস মশারি কাঁপাইয়া যাইতেছে, এবং জ্যোৎস্না সুখশ্রান্ত সুপ্ত সুন্দরীর মতো বাতায়নবর্তী পালঙ্কের এক প্রান্তে নিলীন হইয়া পড়িয়া আছে। সমস্তই মিথ্যা। 'ভালোবাসা আমার অপেক্ষাও মিথ্যাবাদিনী, মিথ্যাচারিণী।'

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

পরদিন প্রভাতেই অনিদ্রাশুষ্ক হেমন্ত পাগলের মতো হইয়া প্যারিশংকর ঘোষালের বাড়িতে গিয়া উপস্থিত হইল। প্যারিশংকর জিজ্ঞাসা করিল, "কী হে বাপু, কী খবর।"

হেমন্ত মস্ত একটা আগুনের মতো যেন দাউদাউ করিয়া জ্বলিতে জ্বলিতে কাঁপিতে কাঁপিতে বলিল, "তুমি আমাদের জাতি নষ্ট করিয়াছ, সর্বনাশ করিয়াছ - তোমাকে ইহার শাস্তি ভোগ করিতে হইবে" - বলিতে বলিতে তাহার কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া আসিল।

প্যারিশংকর ঈষৎ হাসিয়া কহিল, "আর, তোমরা আমার জাতি রক্ষা করিয়াছ, আমার সমাজ রক্ষা করিয়াছ, আমার পিঠে হাত বুলাইয়া দিয়াছ! আমার প্রতি তোমাদের বড়ো যত্ন, বড়ো ভালোবাসা!"

হেমন্তের ইচ্ছা হইল সেই মুহূর্তেই প্যারিশংকরকে ব্রহ্মতেজে ভস্ম করিয়া দিতে, কিন্তু সেই তেজে সে নিজেই জ্বলিতে লাগিল, প্যারিশংকর দিব্য সুস্থ নিরাময় ভাবে বসিয়া রহিল।

হেমন্ত ভগ্নকণ্ঠে বলিল, "আমি তোমার কী করিয়াছিলাম।"

প্যারিশংকর কহিল, "আমি জিজ্ঞাসা করি আমার একটিমাত্র কন্যা ছাড়া আর সন্তান নাই, আমার সেই কন্যা তোমার বাপের কাছে কী অপরাধ করিয়াছিল। তুমি তখন ছোটো ছিলে, তুমি হয়তো জান না - ঘটনাটা তবে মন দিয়া শোনো। ব্যস্ত হইয়ো না বাপু, ইহার মধ্যে অনেক কৌতুক আছে।

"আমার জামাতা নবকান্ত আমার কন্যার গহনা চুরি করিয়া যখন পলাইয়া বিলাতে গেল, তখন তুমি শিশু ছিলে। তাহার পর পাঁচ বৎসর বাদে সে যখন বারিস্টার হইয়া দেশে ফিরিয়া আসিল তখন পাড়ায় যে একটা গোলমাল বাধিল তোমার বোধ করি কিছু কিছু মনে থাকিতে পারে। কিংবা তুমি না জানিতেও পার, তুমি তখন কলিকাতার স্কুলে পড়িতে। তোমার বাপ গ্রামের দলপতি হইয়া বলিলেন, 'মেয়েকে যদি স্বামীগৃহে পাঠানো অভিপ্রায় থাকে তবে সে মেয়েকে আর ঘরে লইতে পারিবে না।' আমি তাঁহাকে হাতে পায়ে ধরিয়া বলিলাম, 'দাদা, এ যাত্রা তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমি ছেলেটিকে গোবর খাওয়াইয়া প্রায়শ্চিত্ত করাইতেছি, তোমরা তাহাকে জাতে তুলিয়া লও।' তোমার বাপ কিছুতেই রাজি হইলেন না, আমিও আমার একমাত্র মেয়েকে ত্যাগ করিতে পারিলাম না। জাত ছাড়িয়া, দেশ ছাড়িয়া, কলিকাতায় আসিয়া ঘর করিলাম। এখানে আসিয়াও আপদ মিটিল না। আমার ভ্রাতুষ্পুত্রের যখন বিবাহের সমস্ত আয়োজন করিয়াছি, তোমার বাপ কন্যাকর্তাদের উত্তেজিত করিয়া সে বিবাহ ভাঙিয়া দিলেন। আমি প্রতিজ্ঞা করিলাম, যদি ইহার প্রতিশোধ না লই তবে আমি ব্রাহ্মণের ছেলে নহি। - এইবার কতকটা বুঝিতে পারিয়াছ - কিন্তু আর-একটু সবুর করো - সমস্ত ঘটনাটি শুনিলে খুশি হইবে - ইহার মধ্যে একটু রস আছে।

"তুমি যখন কালেজে পড়িতে তোমার বাসার পাশেই বিপ্রদাস চাটুজ্জের বাড়ি ছিল। বেচারা এখন মারা গিয়াছে। চাটুজ্জেমহাশয়ের বাড়িতে কুসুম নামে একটি শৈশববিধবা অনাথা কায়স্থকন্যা আশ্রিতভাবে থাকিত। মেয়েটি বড়ো সুন্দরী - বুড়ো ব্রাহ্মণ কালেজের ছেলেদের দৃষ্টিপথ হইতে তাহাকে সংবরণ করিয়া রাখিবার জন্য কিছু দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হইয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু, বুড়োমানুষকে ফাঁকি দেওয়া একটি মেয়ের পক্ষে কিছুই শক্ত নহে। মেয়েটি প্রায়ই কাপড় শুকাইতে দিতে ছাতে উঠিত এবং তোমারও বোধ করি ছাতে না উঠিলে পড়া মুখস্থ হইত না। পরস্পরের ছাত হইতে তোমাদের কোনোরূপ কথাবার্তা হইত কি না সে তোমরাই জান, কিন্তু মেয়েটির ভাব-গতিক দেখিয়া বুড়ার মনেও সন্দেহ হইল। কারণ কাজকর্মে তাহার ক্রমিক ভুল হইতে দেখা গেল এবং তপস্বিনী গৌরীর মতো দিন দিন সে আহারনিদ্রা ত্যাগ করিতে লাগিল। এক-একদিন সন্ধ্যাবেলায় সে বুড়ার সম্মুখেই অকারণে অশ্রু সংবরণ করিতে পারিত না।

"অবশেষে বুড়া আবিষ্কার করিল, ছাতে তোমাদের মধ্যে সময়ে অসময়ে নীরব দেখাসাক্ষাৎ চলিয়া থাকে - এমন কি, কালেজ কামাই করিয়াও মধ্যাহ্নে চিলের ঘরের ছায়ায় ছাতের কোণে তুমি বই হাতে করিয়া বসিয়া থাকিতে; নির্জন অধ্যয়নে সহসা তোমার এত উৎসাহ জন্মিয়াছিল। বিপ্রদাস যখন আমার কাছে পরামর্শ জানিতে আসিল আমি কহিলাম, 'খুড়ো, তুমি তো অনেক দিন হইতে কাশী যাইবার মানস করিয়াছ - মেয়েটিকে আমার কাছে রাখিয়া তীর্থবাস করিতে যাও, আমি তাহার ভার লইতেছি।'

"বিপ্রদাস তীর্থে গেল। আমি মেয়েটিকে শ্রীপতি চাটুজ্জের বাসায় রাখিয়া তাহাকেই মেয়ের বাপ বলিয়া চালাইলাম। তাহার পর যাহা হইল তোমার জানা আছে। তোমার কাছে আগাগোড়া সব কথা খোলসা করিয়া বলিয়া বড়ো আনন্দ লাভ করিলাম। এ যেন একটি গল্পের মতো। ইচ্ছা আছে, সমস্ত লিখিয়া একটি বই করিয়া ছাপাইব। আমার লেখা আসে না। আমার ভাইপোটা শুনিতেছি একটু-আধটু লেখে - তাহাকে দিয়া লেখাইবার মানস আছে। কিন্তু, তোমাতে তাহাতে মিলিয়া লিখিলে সব চেয়ে ভালো হয়, কারণ গল্পের উপসংহারটি আমার ভালো করিয়া জানা নাই।"

হেমন্ত প্যারিশংকরের এই শেষ কথাগুলিতে বড়ো-একটা কান না দিয়া কহিল, "কুসুম এই বিবাহে কোনো আপত্তি করে নাই ?"
প্যারিশংকর কহিল, "আপত্তি ছিল কি না বোঝা ভারি শক্ত। জান তো বাপু, মেয়েমানুষের মন-যখন 'না' বলে তখন 'হাঁ' বুঝিতে হয়। প্রথমে তো দিনকতক নূতন বাড়িতে আসিয়া তোমাকে না দেখিতে পাইয়া কেমন পাগলের মতো হইয়া গেল। তুমিও দেখিলাম, কোথা হইতে সন্ধান পাইয়াছ ; প্রায়ই বই হাতে করিয়া কালেজে যাত্রা করিয়া তোমার পথ ভুল হইত - এবং শ্রীপতির বাসার সম্মুখে আসিয়া কী যেন খুঁজিয়া বেড়াইতে ; ঠিক যে প্রেসিডেন্সি কালেজের রাস্তা খুঁজিতে তাহা বোধ হইত না, কারণ, ভদ্রলোকের বাড়ির জানালার ভিতর দিয়া কেবল পতঙ্গ এবং উন্মাদ যুবকদের হৃদয়ের পথ ছিল মাত্র। দেখিয়া শুনিয়া আমার বড়ো দুঃখ হইল। দেখিলাম, তোমার পড়ার বড়োই ব্যাঘাত হইতেছে এবং মেয়েটির অবস্থাও সংকটাপন্ন।

"একদিন কুসুমকে ডাকিয়া লইয়া কহিলাম, 'বাছা, আমি বুড়ামানুষ, আমার কাছে লজ্জা করিবার আবশ্যক নাই - তুমি যাহাকে মনে মনে প্রার্থনা কর আমি জানি। ছেলেটিও মাটি হইবার জো হইয়াছে। আমার ইচ্ছা, তোমাদের মিলন হয়।' শুনিবামাত্র কুসুম একেবারে বুক ফাটিয়া কাঁদিয়া উঠিল এবং ছুটিয়া পালাইয়া গেল। এমনি করিয়া প্রায় মাঝে মাঝে সন্ধ্যাবেলায় শ্রীপতির বাড়ি গিয়া কুসুমকে ডাকিয়া, তোমার কথা পাড়িয়া, ক্রমে তাহার লজ্জা ভাঙিলাম। অবশেষে প্রতিদিন ক্রমিক আলোচনা করিয়া তাহাকে বুঝাইলাম যে, বিবাহ ব্যতীত পথ দেখি না। তাহা ছাড়া মিলনের আর-কোনো উপায় নাই। কুসুম কহিল, কেমন করিয়া হইবে। আমি কহিলাম, 'তোমাকে কুলীনের মেয়ে বলিয়া চালাইয়া দিব।' অনেক তর্কের পর সে এ বিষয়ে তোমার মত জানিতে কহিল। আমি কহিলাম, ছেলেটা একে খেপিয়া যাইবার জো হইয়াছে, তাহাকে আবার এ-সকল গোলমালের কথা বলিবার আবশ্যক কী। কাজটা বেশ নিরাপত্তে নিশ্চিন্তে নিষ্পন্ন হইয়া গেলেই সকল দিকে সুখের হইবে। বিশেষত, এ কথা যখন কখনো প্রকাশ হইবার কোনো সম্ভাবনা নাই তখন বেচারাকে কেন গায়ে পড়িয়া চিরজীবনের মতো অসুখী করা।

"কুসুম বুঝিল কি বুঝিল না, আমি বুঝিতে পারিলাম না। কখনো কাঁদে, কখনো চুপ করিয়া থাকে। অবশেষে আমি যখন বলি 'তবে কাজ নাই' তখন আবার সে অস্থির হইয়া উঠে। এইরূপ অবস্থায় শ্রীপতিকে দিয়া তোমাকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠাই। দেখিলাম, সম্মতি দিতে তোমার তিলমাত্র বিলম্ব হইল না। তখন বিবাহের সমস্ত ঠিক হইল।

"বিবাহের অনতিপূর্বে কুসুম এমনি বাঁকিয়া দাঁড়াইল, তাহাকে আর কিছুতেই বাগাইতে পারি না। সে আমার হাতে পায়ে ধরে ; বলে, 'ইহাতে কাজ নাই, জ্যাঠামশায়।' আমি বলিলাম, 'কী সর্বনাশ। সমস্ত স্থির হইয়া গেছে, এখন কী বলিয়া ফিরাইব।' কুসুম বলে, 'তুমি রাষ্ট্র করিয়া দাও আমার হঠাৎ মৃত্যু হইয়াছে-আমাকে এখান হইতে কোথাও পাঠাইয়া দাও।' আমি বলিলাম, 'তাহা হইলে ছেলেটির দশা কী হইবে। তাহার বহুদিনের আশা কাল পূর্ণ হইবে বলিয়া সে স্বর্গে চড়িয়া বসিয়াছে, আজ আমি হঠাৎ তাহাকে তোমার মৃত্যুসংবাদ পাঠাইব! আবার তাহার পর দিন তোমাকে তাহার মৃত্যুসংবাদ পাঠাইতে হইবে, এবং সেইদিন সন্ধ্যাবেলায় আমার কাছে তোমার মৃত্যুসংবাদ আসিবে। আমি কি এই বুড়াবয়সে স্ত্রীহত্যা ব্রহ্মহত্যা করিতে বসিয়াছি।'

"তাহার পর শুভলগ্নে শুভ বিবাহ সম্পন্ন হইল-আমি আমার একটা কর্তব্যদায় হইতে অব্যাহতি পাইয়া বাঁচিলাম। তাহার পর কী হইল তুমি জান।"

হেমন্ত কহিল, "আমাদের যাহা করিবার তাহা তো করিলেন, আবার কথাটা প্রকাশ করিলেন কেন।"

প্যারিশংকর কহিলেন, "দেখিলাম, তোমার ছোটো ভগ্নীর বিবাহের সমস্ত স্থির হইয়া গেছে। তখন মনে মনে ভাবিলাম, একটা ব্রাহ্মণের জাত মারিয়াছি, কিন্তু সে কেবল কর্তব্যবোধে। আবার আর-একটা ব্রাহ্মণের জাত মারা পড়ে, আমার কর্তব্য এটা নিবারণ করা। তাই তাহাদের চিঠি লিখিয়া দিলাম, বলিলাম, হেমন্ত যে শূদ্রের কন্যা বিবাহ করিয়াছে তাহার প্রমাণ আছে।"

হেমন্ত বহুকষ্টে ধৈর্য সংবরণ করিয়া কহিল, "এই-যে মেয়েটিকে আমি পরিত্যাগ করিব, ইহার দশা কী হইবে। আপনি ইহাকে আশ্রয় দিবেন ?"

প্যারিশংকর কহিলেন, "আমার যাহা কাজ তাহা আমি করিয়াছি, এখন পরের পরিত্যক্ত স্ত্রীকে পোষণ করা আমার কর্ম নহে।- ওরে, হেমন্তবাবুর জন্য বরফ দিয়া একগ্লাস ডাবের জল লইয়া আয়, আর পান আনিস।"

হেমন্ত এই সুশীতল আতিথ্যের জন্য অপেক্ষা না করিয়া চলিয়া গেল।

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

কৃষ্ণপরে পঞ্চমী। অন্ধকার রাত্রি। পাখি ডাকিতেছে না। পুষ্করিণীর ধারের লিচু গাছটি কালো চিত্রপটের উপর গাঢ়তর দাগের মতো লেপিয়া গেছে। কেবল দক্ষিণের বাতাস এই অন্ধকারে অন্ধভাবে ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, যেন তাহাকে নিশিতে পাইয়াছে। আর আকাশের তারা নির্নিমেষ সতর্ক নেত্রে প্রাণপণে অন্ধকার ভেদ করিয়া কী-একটা রহস্য আবিষ্কার করিতে প্রবৃত্ত আছে।

শয়নগৃহে দীপ জ্বালা নাই। হেমন্ত বাতায়নের কাছে খাটের উপরে বসিয়া সম্মুখের অন্ধকারের দিকে চাহিয়া আছে। কুসুম ভূমিতলে দুই হাতে তাহার পা জড়াইয়া পায়ের উপর মুখ রাখিয়া পড়িয়া আছে। সময় যেন স্তম্ভিত সমুদ্রের মতো স্থির হইয়া আছে। যেন অনন্তনিশীথিনীর উপর অদৃষ্ট চিত্রকর এই একটি চিরস্থায়ী ছবি আঁকিয়া রাখিয়াছে - চারি দিকে প্রলয়, মাঝখানে একটি বিচারক এবং তাহার পায়ের কাছে একটি অপরাধিনী।

আবার চটিজুতার শব্দ হইল। হরিহর মুখুজ্জে দ্বারের কাছে আসিয়া বলিলেন, "অনেকক্ষণ হইয়া গিয়াছে, আর সময় দিতে পারি না। মেয়েটাকে ঘর হইতে দূর করিয়া দাও।"

কুসুম এই স্বর শুনিবামাত্র একবার মুহূর্তের মতো চিরজীবনের সাধ মিটাইয়া হেমন্তের দুই পা দ্বিগুণতর আবেগে চাপিয়া ধরিল, চরণ চুম্বন করিয়া পায়ের ধুলা মাথায় লইয়া পা ছাড়িয়া দিল।

হেমন্ত উঠিয়া গিয়া পিতাকে বলিল, "আমি স্ত্রীকে ত্যাগ করিব না।"

হরিহর গর্জিয়া উঠিয়া কহিল, "জাত খোয়াইবি ?"

হেমন্ত কহিল, "আমি জাত মানি না।"

"তবে তুইসুদ্ধ দূর হইয়া যা।"

প্রথম কবি ও প্রথম কাব্য: উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

· 0 মন্তব্য(গুলি)

তমসা নদীর ধারে বাল্মীকি মুনির তপোবন ছিল। দুধারে গভীর বন, তাহার মাঝখান দিয়া সুন্দর ছোট নদীটি কুলকুল করিয়া বহিতেছে। তাহার জল এতই পরিষ্কার যে তলার বালি অবধি স্পষ্ট দেখিতে পাওয়া যায়। একটুও কাদা নাই, একগাছিও শ্যাওলা নাই। কাচের মতো টলমল করিতেছে। বাল্মীকি নদীর ধারে বেড়াইতে আসিলেন, আর সেই নির্মল জল দেখিয়া তাঁহার মনে বড়ই সুখ হইল। সঙ্গে তাঁহার শিষ্য ভরদ্বাজ ছিলেন, তাঁহাকে তিনি বলিলেন, “দেখ ভরদ্বাজ, নদীর জল কি নির্মল, যেমন সাধু লোকের মন। আমার বল্কল দাও, আমি এখানে স্নান করিব।”

সেই খানে দুটি বক নদীর ধারে খেলা করিতেছিল। এমন সুন্দর দুটি পাখি এবং তাহাদের এমন মিষ্ট ডাক, আর তাহারা মনের আনন্দে এমনি চমৎকার খেলা করিতেছিল যে দেখিয়া মুনি আর চোখ ফিরাইতে পারিলেন না। পাখি দুটির উপরে মুনির কেমন স্নেহ জন্মিয়া গেল, তিনি স্নানের কথা ভুলিয়া কেবলই তাহাদের খেলা দেখিতে লাগিলেন।

এমন সময় কোথা হইতে এক দুষ্ট ব্যাধ আসিয়া পাখি দুটির পানে তীর ছুঁড়িয়া মারিল। এমন সুখে পাখী দুটি খেলা করিতেছিল, তাহাদের কোনো দোষ ছিল না,কোনো বিপদের কথা তাহারা জানিত না। এমন নিরীহ জীবকে বধ করে, এমন নিষ্ঠুরও লোক হয়? তীর খাইয়া পুরুষ পাখিটি যাতনায় ছট্‌ফট্‌ করিতে লাগিল, মেয়েটি শোকে আর ভয়ে কাঁদিয়া আকুল হইল। মুনি আর এ দুঃখ সহিতে না পারিয়া ব্যাধকে বলিলেন, “ওরে ব্যাধ, এমন সুখে পাখিটি খেলা করিতেছিল, তাহাকে তুই বধ করিলি? তোর কখনই ভালো হইবে না!”

দয়ালু মুনির মনের দুঃখ তাঁহার চোখের জলের সঙ্গে সঙ্গে এই কথাগুলির ভিতর দিয়া ফুটিয়া বাহির হইল।

সেই কথায় আপনা হইতেই ছন্দ আসিয়া আপনা হইতেই তাহা কবিতা হইয়া গেল। সেই কবিতাই সকলের প্রথম কবিতা, তাহার পূর্বে কেহ কবিতা রচনা করে নাই।

মুনি আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, “এ কি চমৎকার কথা আমি বলিলাম! আমি কিছুই জানি না, তবু ইহাতে বীণার ছন্দের মতন কেমন সুন্দর ছন্দ হইল! ইহার চারিভাগে সমান সমান অক্ষর হইল! আমি বলি, ইহার নাম ‘শ্লোক’ হউক, কেননা আমার শোকের সময় ইহা আমার মুখ দিয়া বাহির হইয়াছে।”

ভরদ্বাজও বলিলেন, ‘গুরুদেব! কি সুন্দর কথা, এমন কথা তো আর কেহ কখনো বলে নাই। ইহার নাম শ্লোকই হউক।”

তারপর মুনি স্নান শেষে ঘরে আসিয়া সেই পাখির আর সেই সুন্দর ছন্দের কথা ভাবিতেছেন, এমন সময় ব্রহ্মা আসিয়া সেখানে উপস্থিত হইলেন, পাখি দুইটির দুঃখে কাতর হইয়া মুনি আর ব্রহ্মাকে অন্য কথা বলিবার অবসর পাইলেন না, তাঁহাকে সেই দুষ্ট ব্যাধের কথা বলিয়া সেই কবিতাটি গাহিয়া শুনাইলেন।

তাহা শুনিয়া ব্রহ্মা বলিলেন, “বাল্মীকি, তোমার এ কবিতার নাম শ্লোকই হউক। এইরূপ শ্লোক লিখিয়া তুমি রামের বৃত্তান্ত বর্ণনা কর। সে বড় সুন্দর কাহিনী, তাহা যে পড়িবে, তাহারই মঙ্গল হইবে। তুমি যাহা লিখিবে, তাহার একটি কথাও মিথ্যা হইবে না। যতদিন পৃথিবীতে পর্বত আর নদী সকল থাকিবে, ততদিন লোকে তোমার ‘রামায়ণে’র আদর করিবে। আর ততদিন রামায়ণের আদর থাকিবে, তুমি স্বর্গে গিয়া ততদিন আমার লোকে থাকিতে পাইবে।”

এই বলিয়া ব্রহ্ম চলিয়া গেলেন, আর তাঁহার কথাগুলি মনে করিয়া বাল্মীকি বলিলেন, “এইরূপ মিষ্ট শ্লোক দিয়া আমি রামায়ণ রচনা করিব।”

তারপর সেই ধার্মিক কুশাসনে বসিয়া জোড়হাতে ভগবানকে স্মরণপূর্বক রামায়ণ লিখিতে আরম্ভ করিলেন। ক্রমে রামায়ণ শেষ হইল। তখন মুনি ভাবিলেন, ‘কাব্য তো শেষ হইল, এখন ইহা গাহিবে কে? ঠিক সেই সময়ে ‘কুশী’ ‘লব’ দুই ভাই আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিলেন। দুটি ভাই রামেরই পুত্র, মুনির বেশে সেই আশ্রমে থাকিয়া লেখাপড়া শিখেন। দেবতার মতন সুন্দর, গন্ধর্বের মত মিষ্ট গান গাহেন। মুনি বলিলেন, “এই আমার রামায়েণের উপযুক্ত গায়ক।”

সেই দুটি ভাইকে পরম যত্নের সহিত মুনি রামায়ণ শিক্ষা দিলেন। তারপর একদিন সকল মুনিদিগকে সভায় ডাকিয়া সেই রামায়ণের গান তাঁহাদিগকে শোনানো হইল। মুনিরা সকেল মোহিত হইয়া সে গান শুনিলেন, তাঁহাদের চোখ দিয়া দরদর ধারে জল পড়িতে লাগিল, আর মুখ দিয়া ক্রমাগত কেবল “আহা!” “আহা!” এই শব্দ বাহির হইতে লাগিল। শেষে তাঁহারা আর স্থির থাকিতে পারিলেন না। একজন মুনি তাঁহার নিকটে যাহা কিছু ছিল, সকলই কুশী-লবকে দিয়া দিলেন। অন্যেরা কেহ বল্কল, কেহ হরিণের ছাল, কেহ কমণ্ডলু, কেহ কুড়াল, কেহ কৌপীন দিলেন। একজন মুনি কাঠ আনিতে চাহিয়াছিলেন, সেই কাঠ বাঁধিবার দড়িগাছি ভিন্ন তাঁহার নিকটে আর কিছু ছিল না, তিনি সেই দড়িগাছিই কুশীলবকে দিয়া বারবার আশীর্বাদ করিলেন।

ইন্টারনেট সিকিউরিটি..ঝামেলা বিহীন সমাধান

· 0 মন্তব্য(গুলি)

ব্লুকোটের কে-৯ ওয়েব প্রটেকশা একটি কন্টেন্ট ফিল্টারিং ফ্রি সফটওয়্যার। পারিবারিক ভাবে ইন্টারনেটকে নিরাপদ রাখার জন্যই এর যাত্রা। বর্তমানে এর ব্যবহারকারী হলো প্রায় ৭,৬৫,০০০।

ডাউনলোড করে ইন্সটলেশনরে পর এর একটি এডমিন প‌্যানেল আসবে। সেখানে একটি পাসওয়ার্ড দিতে হবে..ফিল্টার কন্টেন্ট এর যেকোন পরিবর্তন করতে বা সফটওয়্যারটি আনইনস্টল করতে এটি লাগবে।



এটি ইন্টারনেটের সকল সাইটকে ৬০ টি ক্যাটাগরীতে ভাগ করে। ১৫ লক্ষ ইউজার রেটিং এর ভিত্তিতে এই ক্যাটাগরী ভাগ করা হয়। ডিফল্ট হিসাবে অনেক গুলো কন্টেন্ট বন্ধ থাকবে। যেমন: সোশাল নেটওয়ার্ক, যার ফলে ফেসবুকে ঢুকতে পারবেন না। কোন পরিবর্তন করতে চাইলে এডমিন প‌্যানেলে ঢুকে করে নিতে পারবেন সহজেই।



আপনি যদি কোন ওয়েব সাইট খুলতে যেয়ে ব্লক মেসেজ পান, সেখানে আ্যডমিন প‌্যানেল অপশন আসবে। পাসওয়ার্ড দিয়ে সাময়িক (১৫ মিনিট) বা স্হায়ী ভাবে সাইটটির ব্লক তুলে দিতে পারবেন।

এটি বিশেষ আরো কিছু সুবিধা যেমন: সার্ভিস বেস ফিল্টারিং, ডায়নামিক রিয়েল টাইম রেটিং, অটোমেটিক আপডেট, কার্যকরী ক্যাশিং ইত্যাদি প্রদান করে। এটি সিস্টেমর খুব কম রির্সোস ব্যবহার করে। যেকোন আজে-বাজে সাইট, আ্যড, পপ-আপ ব্লক করে এবং আপনার পিসির সিকিউরিটি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

যাদের ছেলে-মেয়েরা বাসায় নেট ব্যবহার করে, তাদের এটি অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত।

এই ব্লগে..

বাংলাদেশ: মানুষ, প্রেম, স্বাধীনতা, রাজনীতি, দারিদ্রতা আর সম্ভাবনার দেশ। সে দেশের কিছু বিষয়...মনের গভীরে আকি-বুকি কাটা ঘটনা আর অবসরের হাবিজাবি নিয়ে আমার এই ব্লগ।

যেকোন বিষয় নিয়ে মেইল করতে পারেন: bdidol@জিমেইল.কম

সাম্প্রতিক পোষ্ট

সামহ্যোয়ার ব্লগ পোষ্ট