যুদ্ধাপরাধীদের স্বার্থেই মামলা!!

২৬ নভে, ২০০৮ ·

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ৩৬ জনকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করার আবেদন জানিয়ে ঢাকা জেলা আদালতে দায়ের করা মামলা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। আজকের সমকালে এই বিষয়ে একটি রির্পোট এসেছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের লে. জেনারেল (অব.) এম হারুন অর রশিদ সমকালকে বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ জামায়াতকে আইনগত বৈধতা দিতেই এ মামলা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, গোলাম আযমের নাগরিকত্ব নিয়ে যেমনটি হয়েছে, এ মামলার পরিণতিও তা-ই হয় কি-না এটাই সন্দেহ। তিনি বলেন, হঠাৎ করে দায়ের করা এ মামলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামসহ যুদ্ধাপরাধী পক্ষের সংগঠন ও ব্যক্তিরা যুদ্ধাপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন। জাতীয় নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিরোধ করারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঠিক সে সময় গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ফজলুল কাদের চৌধুরী, তার ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ৩৬ জনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ঘোষণা করার জন্য তিন তরুণ আইনজীবী গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। বিবাদীরা যাতে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করতে না পারেন এবং কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন সে মর্মে তাদের অযোগ্য ঘোষণারও আবেদন করা হয়েছে। এ মামলায় প্রমাণপত্র (ডকুমেন্টস) হিসেবে ১৯৮৪ সালে তথ্য মন্ত্রলয়ের প্রকাশিত বাংলাদেশের স্টাধীনতা যুদ্ধে দলিলপত্র থেকে বিবাদীদের বিবৃতি ও ভূমিকা সংবলিত বক্তব্য দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ঘোষিত ৫০ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকাও মামলায় দলিল হিসেবে উপস্হাপন করা হয়েছে। এর বাইরে তাদের হাতে আর কোনো প্রমাণপত্র নেই বলে জানা গেছে। জানা যায়, কোনো মামলা আইনগতভাবে প্রমাণের জন্য যে ধরনের তথ্য-প্রমাণ দরকার পড়ে, এর কোনো কিছুই এখন পর্যন্ত তাদের হাতে নেই।

লে. জেনারেল (অব.) এম হারুন অর রশিদ বলেন, ‘অপরিকল্কিপ্পতভাবে মামলা করার কারণে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বৈধ বলে আদালত রায় দিয়েছেন। ঠিক একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বলেই আমাদের সন্দেহ। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ঘোষণার জন্য দায়ের করা এ মামলা প্রমাণের জন্য কী ধরনের ডকুমেন্টস ব্যবহার করা হবে তা আমাদের জানা নেই। এমনকি তাদের হাতে আদৌ কোনো ডকুমেন্টস আছে কি-না তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’ তিনি বলেন, কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করেই মামলাটি করা হলো। জামায়াত টাকা দিয়ে মামলাটি করিয়েছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ জামায়াত বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য দেদার টাকা খরচ করছে। এ মামলা যদি খারিজ হয়ে যায়, তবে যুদ্ধাপরাধীরা আইনগত ভিত্তি পেয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, দেশের সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম আন্দোলনে আছে। একই ইস্যুতে স্বাধীনতার সপক্ষের সব শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ। ঠিক এ সময় কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়া মামলা করার অর্থ কী?

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, বাদী বা আইনজীবী কেউই এ মামলা করার বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করেননি। এভাবে এ মামলা করা কতটুকু যথাযথ হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

মামলার বাদী তিন তরুণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ লিটন, মোঃ সাফায়াৎ হোসেন, এবং শিক্ষানবিশ আইনজীবী রাজিব আহমেদ। এ তিনজনই বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের বর্তমান ও সাবেক নেতা। তাদের আইনজীবী খন্দকার মহিবুল হাসান আপেল মিরপুরের রূপনগর ল’ কলেজের প্রভাষক। তারা বলেন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম যুদ্ধাপরাধী হিসেবে নাম প্রকাশের পর আজ পর্যন্ত কেউই প্রতিবাদ করেননি। ফলে এটা ধরে নেওয়া যায়, বিবাদীরা প্রকৃতপক্ষে অপরাধী। তারা আরো বলেন, বিবাদীরা মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্হানী হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে এ দেশে পাকিস্হান সরকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি নামে বিভিন্ন কমিটি গঠন করে বাংলার অর্জিতব্য স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের অপতৎপরতা নিষিদ্ধ না হওয়ায় দেশের টেকসই উল্পুয়ন হচ্ছে না। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আইনগতভাবে তাদের যুদ্ধাপরাধী ঘোষণার জন্য মামলাটি করা হয়েছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে তাদের সহায়তা দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

এই ব্লগে..

বাংলাদেশ: মানুষ, প্রেম, স্বাধীনতা, রাজনীতি, দারিদ্রতা আর সম্ভাবনার দেশ। সে দেশের কিছু বিষয়...মনের গভীরে আকি-বুকি কাটা ঘটনা আর অবসরের হাবিজাবি নিয়ে আমার এই ব্লগ।

যেকোন বিষয় নিয়ে মেইল করতে পারেন: bdidol@জিমেইল.কম

সাম্প্রতিক পোষ্ট

সামহ্যোয়ার ব্লগ পোষ্ট