ওরা সবাই প্রতারণার শিকার!

২৫ নভে, ২০০৮ ·

দুই ধারে সবুজ গাছের বেষ্টনী। ওপর দিয়ে ট্রেন চলছে। এর ঠিক নিচে গালে হাত দিয়ে বসে আছে চুয়াডাঙ্গার হারম্নন। ব্রিজের নিচে পচা দুর্গন্ধময় পানির পাশেই তার নিবাস। সোনার হরিণের খোঁজে স্বদেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় এসেছে বহুদিন আগে। চাকরি জোটেনি। তাই মাথার ওপর দিয়ে যখন ট্রেনের ঝম ঝম আওয়াজ মিলিয়ে যাওয়ার মতই হারিয়ে যায় হারম্ননের স্বপ্নসাধ।

শুধু হারম্নন নয়, এরকম অবস্থা আরো অনেকের। কুয়ালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছেই কয়েকশ' বাংলাদেশী এভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন গুনছে। এদের যেমন খাওয়ার সুবিধা নেই তেমনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার ব্যবস্থাও সীমিত। একটি মাদুর বিছিয়ে দিনের পর দিন শুয়ে-বসে সময় পার করছে তারা। মানবেতর এই জীবন যাপন চোখে না দেখলে অনুধাবনযোগ্য নয়। এদের সবাই প্রতারণার শিকার। বাংলাদেশ থেকে এদের যে কাজ এবং বেতনের প্রতিশ্রম্নতি দেয়া হয়েছিল তা দেয়া হয়নি। কাজ করে খেয়ে পরে থাকার বিকল্প কোন ব্যবস্থাও নেই। এখানে রিক্রুটিং এজেন্সী ও তাদের দালালদের খপ্পরে পড়ে আজ তাদের এই দুরবস্থা।

প্রতারিত বাংলাদেশীরা জানিয়েছে, দুই লাখেরও বেশি টাকা দিয়ে তারা এদেশে এসেছে। কিন্তু কাগজেপত্রে স্বাৰর করছে চুরাশি হাজার টাকার। এখানে এনে এজেন্টরা লাপাত্তা হয়ে যায়। আবার কখনো কখনো অসত্দিত্বহীন কোম্পানির নাম করেও বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে আসা হচ্ছে।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তাও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, গত কয়দিন আগেও এক হাজার লোক মালয়েশিয়ায় এসেছে। যে কোম্পানিতে তারা এসেছে, আসলে সেটি এখানে নিবন্ধনকৃত একটি কোম্পানি মাত্র। বাসত্দবে এর কোন অসত্দিত্ব নেই। কোম্পানির যে ফোন নম্বর দেয়া হয়েছিল সেটিও ছিল একটি ফোন-ফ্যাক্সের দোকানের নম্বর।

হতভাগ্য বাংলাদেশীদের নিয়ে এখানে রমরমা বাণিজ্য চলে। এক শ্রেণীর দালাল এদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে বহু টাকা কামাই করেছে। এরা কয়েক মাসের জন্য যে কোন একটি কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ করে দেয়। বিনিময়ে দু'তিনশ' রিঙ্গিত নিয়ে নেয়।

চুয়াডাঙ্গার হারম্ননের মত এদের অনেকেই বাধ্য হয়ে পাম বাগানে কাজ নেয়। সেখানে শারীরিক নির্যাতন থেকে শুরম্ন করে ঠিকমত পারিশ্রমিকও দেয়া হয় না। এ রকম অবস্থায় হারম্নন ১৬ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে পেনাং থেকে কুয়ালালামপুর এসেছে ভাল কোন কাজের আশায়। কিন্তু অন্যদের সঙ্গে তারও ঠাঁই হয়েছে ঐ ব্রীজের নিচে।

প্রতারণার শিকার এসব বাংলাদেশীদের হাতে তাদের পাসপোর্টও নেই। এজেন্টরা পাসপোর্ট রেখে দিয়েছে। চাইলে টাকা দাবি করে। এজেন্টদের ভয়, প্রতারিতরা দেশে ফিরে গেলে তাদের আত্মীয়-স্বজনের ওপর চড়াও হয় কিনা।

কথা বলতে বলতে প্রায় কেঁদেই ফেলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফোরকান। ঠিকমত খেতে পান না অনেক দিন। বললেন- শুরম্নতে এক আপা আমাদের কষ্ট দেখে সবাইকে খাবার দিয়েছিলেন। পরে শুনলাম, হাইকমিশনারের লোকজন নাকি নিষেধ করেছে তাকে। তারপর কেউ আর খাবার নিয়ে আসছে না।

দূতাবাসের কর্মকর্তারা খোঁজ নেন কিনা জানতে চাইলে এখানকার সবাই এক বাক্যে জানান, তাদের কাছে গেলে দুর্ব্যবহার করে। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বিরম্নদ্ধে সবার এনত্দার অভিযোগ। যদিও এসব অভিযোগ ঠিক নয় বলে জানান কর্মকর্তারা।

এই ব্লগে..

বাংলাদেশ: মানুষ, প্রেম, স্বাধীনতা, রাজনীতি, দারিদ্রতা আর সম্ভাবনার দেশ। সে দেশের কিছু বিষয়...মনের গভীরে আকি-বুকি কাটা ঘটনা আর অবসরের হাবিজাবি নিয়ে আমার এই ব্লগ।

যেকোন বিষয় নিয়ে মেইল করতে পারেন: bdidol@জিমেইল.কম

সাম্প্রতিক পোষ্ট

সামহ্যোয়ার ব্লগ পোষ্ট