নির্বাচন ২০০৮: একটা সাদামাটা মূল্যায়ন

৩০ জানু, ২০০৯ ·



প্রথমেই অভিনন্দন আওয়ামীলীগকে এবং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে। এ ধরনের বিজয় বাংলাদেশ এক বার মাত্র দেখতে পেরেছিল এর আগে। দেশের মানুষের পালস অনুভব, তত্বাবধায়ক সরকারের ভাল কাজের উচ্চসিত প্রশংসা, সময়ভিত্তিক মেনিফেস্টো ও সাবলীল কথা তাকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। এবছর শেখ হাসিনা এটা পেরেছেন। খালেদা জিয়া পারেননি। তিনি ভুল সময়ে ভুল স্লোগান দিয়েছেন। দেশ বাচাও মানুষ বাচাও স্লোগানে মানুষ উদ্দীপ্ত হবে দেশের মানুষ যখন বুঝবে সে মরতে বসেছে। মানুষ সেটা মনে করেনি। মানূষ ভেবেছে এই তো আর কয়দিন তার পর এ সরকার গেল বলে। বিএনপি কাকে নমিনেশন দিল আর কাকে দিলনা সে বেপারে কিছু বলব না।

আওয়ামীলীগের দাবী মানুষ সন্ত্রাস আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিএনপিকে প্রতাখ্যান করেছে। বিএনপি’র দুর্নীতিতে মানুষ যেমন হতবিহবল হয়ে পড়েছিল তেমনি আওয়ামীলীগের সততার কথাও কোথাও শোনা যাবেনা। তাহলে কোন ম্যাজিক এই ফল এনে দিল? দেশের সাধারন মানুষ যেমন খালেদা জিয়ার সাধারণ কথা বোঝেনা, তেমনি কোন ম্যাজিকাল বিষয়ও বোঝেনা। বিদেশী পর্যবেক্ষকরা বলেছেন নির্বাচন সঠিক হয়েছে, আমারাও জিকির তুললাম ইয়েছ সঠিক হয়েছে। দেশীয় এত পর্যবেক্ষন প্রতিষ্ঠান আছে ওথচ কারো কথাই যেন আমাদের বিশ্বাস হয়না। সাদারা যা বলে তাই ঠিক। ২০০১ এ শেখ হাসিনার একটা কথার পুনরাবৃতি করি। তিনি বলেছিলেন ‘বিদেশী পর্যবেক্ষকরা ভেতরের ষড়যন্ত্র বুঝবে কী করে’। বাংলাদেশের পলিটিক্যাল জটিলতা দেশের মানুষই বোঝেনা আর ভিন্ন ভাষাভাষী দু দিন এর এরা? আসলেইতো তাই। তারা শুধু ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াটাই দেখেন, কোন প্লট থাকলে তাতো দেখতে বা বুঝতে পারার কথা নয়। প্লটের কথা কেন বললাম? স্বরাস্ট্র উপদেস্টার কথাই ধরি। উনি বললেন, ‘মানুষ দুর্নীতির বিপক্ষে ভোট দিয়েছে’। এর মানে মানুষ সততার পক্ষে ভোট দিয়েছে। আওয়ামীলীগের আমল কী সততার আমল তা কে না জানে? তাহলে তিনি কেন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চাদাবাজির মামলা করালেন, আওয়ামীলীগের এত নেতাকে দুর্নীতির জন্য জেলে ঢোকালেন?

তিনি যখন একথা বলেন এর মানে হচ্ছে, সরাসরি একটা নির্দিস্ট দলের বিপক্ষে কথা বলা এবং তার বিপক্ষে কাজ করা। আর তার প্রমান তারাতো দিয়েছেন আগেই দল ভাংগার কাজ হাতে নিয়ে। নির্বাচন কমিশন হাতে তালি বাজাতে বাজাতে বললেন ‘হ্যা হাফিজের গ্রুপই আসল বিএনপি’। খালেদা জিয়া বিএনপি’র কেউ না। আমাদের সর্বোচ্চ ভরসার স্থল বিচার বিভাগও তাই বলে দিলেন। একটা প্রতিষ্ঠিত দলকে টুকরা বানানোর পরে ‘ক্ষমা চাই’ বললেই মাফ পেতে পারেন না সিইসি।

দুদকের কথা ধরা যাক। দেশসুদ্ধি করতে দুর্নীতিমুক্ত করার গুরু দ্বায়িত্ব নিয়ে তাদের মাথা জলা করে ফেলছেন। সবাই আমরা তাদের প্রশংসা করে চলেছি। ইলেকশনের কয়েক দিন আগে মাত্র কোকোর টাকার সন্ধান দেয়ার মত গুরু দ্বায়িত্ব দেশবাসীকে জানানো হল। বিএনপি’র লোকেরাও চেচামেচি শুরু করল এই বলে যে ইলেকশনে প্রভাব ফেলার জন্য দুদক উদ্দেশ্যমূলকভাবে এইগুলো প্রচার করছে। এর মধ্যে যে একটা গহীন ঈঙ্গিত ছিল বিএনপি’র নেতাদের মাথায়ও ঢুকেনাই। মনে হয় জেল থেকে বের হওয়ার পর মাথা তখনও কাজ করা শুরু করে নাই। বিএনপি ক্ষমতায় আসবেনা এটা নিশ্চিত না হয়ে এই কাজ দুদক কোন দিন করতে যাবেনা। নির্ভিক তা প্রমানের জন্য পর পর দুইবার প্রেস কনফারেন্স করল। তাদের মোরালিটি সম্পর্কেতো আমরা জানি। নেতাদের বিরুদ্ধে চাদাবাজির কেসগুলো বাদীরা যখন তুরতুর করে উইথড্র করে নেয় তখনই বোঝা যায়।

কেয়ারটেকার সরকার ক্ষমতায় আসার পর নেতাদের জেলে ঢোকানে শুরু হল। রিমান্ডে চমকপ্রদ তথ্য আসতে থাকল। প্রায় শতভাগ মানুষও সরকারকে সাপোর্ট দিতে থাকল। এদের আবার নতজানু নীতি পরিগ্রহন ও দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারনে সমর্থনের পারদ নামতে থাকে। নামতে থাকলেও নেমে নেমে মাঝামাঝি অবস্থানে ছিল। যারা সাপোর্ট করেনি তারা কিন্তু এই ক্ষণিক সরকারের শত্রু হয়ে যায়নি। জাস্ট সমর্থন উঠিয়ে নিয়েছে। দলীয় সিল এদের গায়ে নাই।

জোট নেত্রী দাড়ালেন এই সরকারের বিরুদ্ধে। নিজের সমর্থনে জোড়ালো কোন কথা শোনা যায়নি, আওয়ামীলীগের ১৯৯৬-২০০০ শাষন আমলের কথাত আমরা জানি, সেই আমল-এর কথা না বলে এই সরকারের বিরুদ্ধে লেগে গেলেন। মানুষ হতাশ হয়েছে এই ভেবে যে দলের নেতাদের গ্রেফতার করায় এই সরকার খালেদা জিয়ার কাছে ভাল না। জেলে যাওয়ার আগে এবং জেলে বসে তিনি দৃঢ়তা দেখিয়ে যে ভাবমুর্তি অর্জন করেছিলেন তা খুইয়েছেন ইলেকশন ক্যাম্পেইন করে। ফলশ্রুতিতে এই সরকার হয়ে পড়ল ভীত। জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে এ সরকারের কেউ রেহাই পাবেনা এটা তারা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। আর ইলেকশন কমিশনতো তাদের পাপের কথা ভুলে যায়নি।

কেউ কি বিপদ ডেকে আনে? কেউ না।

ড. ফখরুদ্দীন আহমেদকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করলেন বিএনপি’র ফলাফল প্রত্যাখান করার বিষয়ে। তিনি নির্বাচন কমিশনের উপর দ্বায় চাপিয়ে যেভাবে স্থান ত্যাগ করলেন তাতে তিনি সকলের কাছে একটা প্রশ্ন রেখে গেলেন। তাকে এভাবে জবাব দিতে আর কখনো দেখা যায়নি। সৎ মানুষ বলেই হয়তো প্রশ্নবোধক চিহ্নটা রেখে গেলেন। কারন, কে না জানে ২৬৩ টি সিট পাওয়ার মত স্বর্গীয় কোন কাজ যেমন আওয়মীলীগও করেনি আর ৩২টা সিট পাওয়ার মত গোনাহ বিএনপিও করেনি।

আর একটা কথা এই বিজয় যদি দুর্নীতি ও নেপোটিজম এর বিরুদ্ধে হয় তাহলে সংস্কারবাদী, তথাকথিত ‘সৎ প্রার্থীরা’ কেন নির্লজ্জভাবে হেরে আসবেন?
শেখ হাসিনাকে আবার অভিনন্দন। পোস্ট ইলেকশন প্রেস কনফারেন্সে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন, দারিদ্র্যকে বিদায় দেবেন, বিরোধীদের সংগে নেবেন তিনি এই যে আশার আলো জ্বেলেছেন আমাদের মাঝে, সেই আলো যেন নিভে না যায়।

ই-মেলা থেকে সংকলিত

এই ব্লগে..

বাংলাদেশ: মানুষ, প্রেম, স্বাধীনতা, রাজনীতি, দারিদ্রতা আর সম্ভাবনার দেশ। সে দেশের কিছু বিষয়...মনের গভীরে আকি-বুকি কাটা ঘটনা আর অবসরের হাবিজাবি নিয়ে আমার এই ব্লগ।

যেকোন বিষয় নিয়ে মেইল করতে পারেন: bdidol@জিমেইল.কম

সাম্প্রতিক পোষ্ট

সামহ্যোয়ার ব্লগ পোষ্ট